আগামীকাল পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক শুরু হবে, বিগত ১৫ বছরে বিদেশে পাচার হওয়া ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
আগামীকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাসহ (এফবিআই) এ বিষয়ে যেসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করে, তাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের রাঘববোয়াল (ক্রীড়নক), আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা ২৮ লাখ কোটি টাকা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করেছেন, উল্লেখ করে সম্প্রতি শ্বেতপত্র প্রতিবেদন দিয়েছে এ-সংক্রান্ত কমিটি। এই হিসাবে প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
আজ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। জাতিসংঘ ২০০৩ সালে এই দিনকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ঘোষণা করে। ২০০৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় তিন মাস পর গত ২৯ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার পদত্যাগ করেন।
গত ৩১ অক্টোবর তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ৩৯ দিন খালি আছে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারের পদ। ফলে অনেক সিদ্ধান্তও আটকে আছে। বিগত ১৫ বছরে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রদান এবং ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
গত বছরের ৮ নভেম্বর এক পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছিল, হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির পেছনে না ছুটে অতি নগণ্য দুর্নীতির পেছনে ছুটছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের বক্তব্য ছিল, ‘দুদক হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শ্রম, মেধা ও অর্থ ব্যয় না করে ৫ হাজার/ ১০ হাজার টাকার দুর্নীতির পিছনে জনগণের লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করছে। ৫ হাজার টাকার দুর্নীতির মামলা পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানটি ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করে মর্মে জানা যায়। জনগণের কষ্টের টাকার এমন অপব্যবহার কতটুকু সমীচীন?’
রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দিলে দুর্নীতি কমবে না :
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত করতে না পারলে দেশে বিভিন্ন খাতে যেসব সংস্কার চলছে, তা ব্যর্থ হবে। বাংলাদেশে যতদিন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও দপ্তরগুলোতে রাজনৈতিক-আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত সংস্কৃতি তৈরি না হবে, ততদিন দুদক বা অন্য দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের সফলতা আসবে না।
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে টিআইবি আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তার বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য দুর্নীতিবিরোধী চেতনাকে ধারণ করতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও আমলাতন্ত্রের প্রতি আহ্বান জানান। সাঁড়াশি বা শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে দুদককে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে দুদকের নতুন কমিশনে নিয়োগ না দেওয়ার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, এমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে যা সম্পূর্ণ দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকবে।
জীবন বাঁচাতে দুর্নীতি থামাতেই হবে :
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, মানুষের জীবন বাঁচাতে দুর্নীতি থামাতেই হবে। দুর্নীতির কালো প্রভাব বেশি পড়ে সমাজের তৃণমূলে। কতিপয় লোক আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়। আর বঞ্চিত হয় অবহেলিত ও হতদরিদ্র মানুষ। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে স্বাস্থ্য ও মৃত্যুঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে দুর্নীতি।