ঢাকা শেয়ার বাজার

৮ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার ২৩ কার্তিক ১৪৩২

উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের জন্যে ওয়ারেন বাফেটের গুরুত্তপূর্ণ কিছু পরামর্শ  

সবার আগে শেয়ার বাজারের নির্ভর যোগ্য খবর পেতে আপনার ফেসবুক থেকে  “ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম” ফেসবুক পেজে লাইক করে রাখুন, সবার আগে আপনার ওয়ালে দেখতে। লাইক করতে লিংকে ক্লিক করুন  facebook.com/dhakasharebazar2024

ওয়ারেন এডওয়ার্ড বাফেট (জন্ম ৩০ আগস্ট ১৯৩০) একজন মার্কিন ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী এবং জনহিতৈষী ব্যক্তি। তাকে বিংশ শতকের সবচেয়ে সফল ব্যবসায়ী এবং শেয়ার বাজারের সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাফেট বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী।

ওয়ারেন এডওয়ার্ড বাফেট একজন মার্কিন ব্যবসায়ী।বিনিয়োগের  কলাকৌশল তিনি খুব ভালো জানেন। সাত বছর বয়স থেকেই ব্যবসার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। ছোটবেলায় চুইংগাম, কোকাকোলার বোতল, এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ম্যাগাজিনও বিক্রি করেছেন।

উল্লেখ্য, মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস ২০১৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষদের যে তালিকা তৈরি করে, সেখানে দেখা গিয়েছিল, ওয়ারেন বাফেটের অবস্থান দ্বিতীয়। ২০২৪ সালে মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস  বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষদের যে তালিকা তৈরি করেছে সেখানে দেখা যাচ্ছে, ওয়ারেন বাফেটের অবস্থান ৬ এ অবস্থান করছে।

ওয়ারেন এডওয়ার্ড বাফেট উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের নানা পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর দেওয়া পরামর্শগুলো থেকে বাছাই করা কিছু পরামর্শ  তুলে ধরা হলো

সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখবেন না

কখনোই সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখবেন না ৷ অর্থাৎ, একটি মাত্র ক্ষেত্রে বিনিয়োগ না করে ভিন্ন ভিন্ন অনেকগুলো খাতে ইনভেষ্ট করুন, যাতে মূলধন হারানোর ঝুঁকি কম থাকে।

আয়ের আরেকটি উৎস তৈরী করুন 

কখনোই আয়ের একমাত্র উৎসের উপর নির্ভর করবেন না। বিনিয়োগের মাধ্যমে আরেকটি উৎস তৈরী করুন।

 সঞ্চয় করুন

খরচের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা সঞ্চয় না করে বরং সঞ্চয়ের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা খরচ করুন।

 না বুঝে ব্যবসায়  নামা যাবেনা 

ওয়ারেন বাফেট মনে করেন, যা করবেন তা পুরো মনোযোগ দিয়ে করা উচিত। ব্যবসার রোমাঞ্চে বুঁদ হয়ে আপনার ব্যবসায়িক বুদ্ধি হারালে চলবে না। সজাগ থাকতে হবে সব সময়। এমন কোন ব্যবসায় বিনিয়োগ করবেন না, যা আপনি বোঝেন না।  আপনার লক্ষ্য, আপনার মনোযোগ যেখানে একীভূত হবে, আপনি সেই দিকটিকেই ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিন।

খারাপ সময়ে ধৈর্য ধরুন
ওয়ারেন বাফেট সব সময় খারাপ সময়ে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। নিজের জীবন থেকেই নিশ্চয় এই শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তিনি। জীবনে বহুবার অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। ১৯৯৩ সালে প্রায় ৪৩ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে তিনি ডেক্সটার শ্যুজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান কিনে নিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে সেই কোম্পানি থেকে ৩৫০ কোটি ডলারের লোকসান হলেও ওয়ারেন বাফেট ধৈর্য হারাননি। ওয়ারেন বলেন, ‘সফলতার দুটি সূত্র। প্রথম সূত্র: কখনো হার মানা যাবে না। দ্বিতীয় সূত্র: প্রথম সূত্রটা কখনো ভোলা যাবে না।’

ভুল থেকে শিখুন
ওয়ারেন বাফেট যে জীবনে শতভাগ সাফল্য পেয়েছেন, তা নয়। তিনি ভুল করেছেন। এমনকি ব্যবসায়িক জীবনে তিনি বড় বড় ভুলও করেছেন। তবে ভুল থেকে তিনি শিখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনের ভুলগুলো মনে রেখে তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দেন ওয়ারেন বাফেট। তিনি মনে করেন, ভুলগুলোর কথা নিজের সন্তানদেরও জানানো উচিত। যেন তারা একই ভুল না করে।

 নিজের ওপর বিনিয়োগ করুন
ব্যক্তিগত দক্ষতার ওপর নির্ভর করছে আপনার সাফল্য। তাই ওয়ারেন বাফেট বলেন, ‘প্রথমত নিজের দক্ষতার ওপর বিনিয়োগ করুন। আপনার দক্ষতা যত বাড়বে, আপনার ব্যবসাও তত সৃজনশীল হবে।’ নিজেকে সময় দেওয়া যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, এ কথা তিনি সব সময় বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘মাঝেমধ্যেই আমি চুপচাপ বসে ভাবি। অনেকে বলতে পারেন এটা নিরর্থক। কিন্তু ব্যবসা ও বিনিয়োগের সমস্যা নিয়ে ভাবতে আমার ভালো লাগে।’

সঠিক সঙ্গ বেছে নিন
‘এমন মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান, যাঁরা আপনার চেয়ে দক্ষ। আপনার সহযোগীদের ব্যবহার যেন আপনার চেয়ে ভালো হয় এবং তা যেন আপনাকে প্রভাবিত করে।’ ব্যবসার ক্ষেত্রে এই হলো ওয়ারেন বাফেটের মূলমন্ত্র। তিনি মনে করেন, মানুষের সততা খুব বড় গুণ। সবার মধ্যে এই গুণ প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। অতএব, সেই মানুষগুলোকেই আপনার আশপাশে রাখুন, যাঁরা ব্যবসার ক্ষেত্রে সৎ। যাঁদের আপনি বিশ্বাস করতে পারেন। ওয়ারেন বাফেট দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের সঙ্গেই ব্যবসা করেছেন, যাঁদের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া ভালো।

অনেক পড়তে হবে
পড়ুয়া হিসেবে এই ধনকুবের ব্যবসায়ীর বেশ সুনাম আছে। অবসর সময়ের ৮০ ভাগ তিনি বই পড়ার পেছনে ব্যয় করেন। বিজনেস অ্যাডভেঞ্চার্স, দ্য এসেস অব ওয়ারেন বাফেট এবং দ্য ইন্টেলিজেন্ট ইনভেস্টর—তরুণ উদ্যোক্তাদের তিনি এই বইগুলো পড়ার পরামর্শ দেন। এইচবিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এখনো দিনের পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা তিনি বই পড়ার পেছনে ব্যয় করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন অন্তত ৫০০ পৃষ্ঠা পড়ো। জ্ঞান হলো “চক্রবৃদ্ধি সুদ”-এর মতো। যত পড়বে, তত বাড়বে।’

অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবুন
ব্যবসার ক্ষেত্রে অতীত ও ভবিষ্যৎ—দুটোকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মানেন ওয়ারেন বাফেট। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যৎটা পরিষ্কার দেখতে না পারলেও ব্যবসার ক্ষেত্রে আমরা তো আমাদের অতীতটা স্পষ্ট দেখতে পাই। সেটাই আমাদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। আবার তিনি এ-ও বলেন, ‘টাকা উপার্জনের এই খেলায় যদি অতীত ইতিহাসই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতো, তবে লাইব্রেরিয়ানরাই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষ হতেন।’

আপনার ‘নায়ক’ কে?
আপনি কাকে অনুসরণ করছেন, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কার মতো হতে চান? খুব ভেবে এই প্রশ্নের উত্তর ঠিক করুন। ওয়ারেন বাফেট বলেন, ‘আমাকে বলো, তোমার চোখে “নায়ক” কে। আমি বলে দেব, তোমার ভবিষ্যৎ কী।’ অর্থাৎ আপনি কাকে আদর্শ বলে মানেন, সেটাই নির্ধারণ করবে আপনার ভবিষ্যৎ।

বিশ্বাস থাকতে হবে
‘আমার বাবা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছেন। আমিও বিশ্বাস করি নিজেকে।’ দ্য গ্রেট মাইন্ডস অব ইনভেস্টিং বইয়ের ভূমিকায় এভাবেই লিখেছেন ওয়ারেন বাফেট। তাঁর দাবি, সব সময় তাঁর মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। বিফল হওয়ার কথা তিনি কখনো ভাবেননি। সফল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে যা ভালোবাসেন, তা-ই করেছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘কত টাকা আয় হচ্ছে বা কত লাভ হচ্ছে, এই হিসাবের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের ওপর বিশ্বাসটা অটুট আছে কি না।’

সমাজের জন্য কাজ করুন
সমাজ থেকে আপনি যেমন পাচ্ছেন, তেমনি সমাজের জন্য কাজ করাও আপনার দায়িত্ব। ওয়ারেন বাফেট বলেন, ‘বহু বছর আগে একজন একটা গাছ লাগিয়েছিল বলেই আজ একজন সেই গাছের ছায়া পাচ্ছে।’ অতএব আপনার পূর্বসূরির অবদান ভুলে গেলে চলবে না। আপনি যদি ১ শতাংশ সৌভাগ্যবান মানুষের মধ্যে পড়েন, বাকি ৯৯ ভাগ মানুষের জন্য কিছু করা আপনার দায়িত্ব।

উল্লেখ্য বিপুল  ধনসম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও ওয়ারেন বাফেট অত্যন্ত মিতব্যয়ী। বাফেট একজন প্রখ্যাত জনহিতৈষী ব্যক্তি। তিনি তার সম্পদের ৯৯ ভাগ জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য দান করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন।

সিএনএন সূত্রে জানা গেছে বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী ব্যক্তি ওয়ারেন বাফেটের মৃত্যুর পর তার সম্পদ কীভাবে ব্যবহৃত হবে সম্প্রতি জানালেন বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের ৯৩ বছর বয়সী এ চেয়ারম্যান।

গত সপ্তাহের এক হিসাব অনুসারে, ওয়ারেন বাফেটের নিট সম্পদের পরিমাণ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে এ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, আবারো উইল পরিবর্তন করেছেন।

এ হিসেবে বাফেটের মৃত্যুর পর বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে। এর বদলে তিন সন্তানের তত্ত্বাবধানে একটি নতুন দাতব্য সংস্থায় সম্পদ রাখবেন ওয়ারেন বাফেট।

Author

  • 'ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম' একটি নির্ভরযোগ্য শেয়ার বাজার ভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল। অর্থ ও বাণিজ্য, রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি, প্রতিবেদন, বিশ্লেষণমূলক লেখা প্রকাশ করে।

    'ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম' শেয়ার মার্কেটের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সততার সহিত পরিবেশন করে এবং কোন সময় অতিরঞ্জিত, ভুল তথ্য প্রকাশ করেনা এবং গুজব ছড়ায়না, বরং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে বদ্ধ পরিকর। এটি একটি স্বাধীন, নির্দলীয় এবং অলাভজনক প্রকাশনা মাধ্যম।

    View all posts
Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আপনি এটাও পড়তে পারেন
শেয়ার বাজার

আপনি এই পৃষ্ঠার কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না।