আজ ১৪ই জুন বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি, ভাষাসৈনিক ও সাংবাদিক হাসান হাফিজুর রহমানের ৯১ তম জন্মদিন। জন্মদিনের এই দিনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই ঢাকা শেয়ার বাজারের পক্ষ থেকে।
হাসান হাফিজুর রহমান ১৯৩২ সালের ১৪ই জুন জামালপুর জেলা শহরের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি গ্রাম তার পৈতৃক নিবাস। পিতার নাম আবদুর রহমান ও মায়ের নাম মাহাফিজা খাতুন।
ভাষা আন্দোলন বিষায়ক প্রথম সংকলন একুশে ফেব্রুয়ারি (১৯৫৩) প্রকাশিত হয় তাঁরই সম্পাদনায়। হাসান হাফিজুর রহমান আরো এক অনবদ্য সৃষ্টির সাথে জড়িত ছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ‘দলিলপত্র‘ এই অনন্য সৃষ্টির ও সম্পাদক ছিলেন তিনি। নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতার এক অনন্য কাজ যা বাংলাদেশের মানুষের কাছে চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।
বাঙালি সংস্কৃতি, সাহিত্য, ভাষা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা ক্ষেত্রে কবির বিচরণ ও লেখালেখি প্রায় চার দশকের। ছাত্রজীবনেই কবির লেখালেখি শুরু। তিনি ১৯৪৬ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে বিএ এবং১৯৫৫ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৫৪ সালে ডাকসুরসাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে সময় থেকেই তিনি সাহিত্য ও সামাজিক বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নেন। ছাত্রাবস্থায়ই ১৯৫২ সালে ‘সাপ্তাহিক বেগম’ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দান করেন। সেই সাথে ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। ভাষা আন্দোলনের স্বারক এবং মহান একুশের প্রথম সঙ্কলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’র সম্পাদনাও তিনি করেন ১৯৫৩ সালে। এ সঙ্কলনে ভাষার ওপর কবির লেখা কবিতা ‘অমর একুশে’ প্রকাশ পায়।
কবি হাসানের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৩টি, এর মধ্যে আটটি কাব্যগ্রন্থ। তার প্রথম লেখাছোটগল্প ‘অশ্রুভেজা পথ চলতে’ ১৯৪৬ সালে প্রকাশ পায় সওগাত পত্রিকায়, তখন তিনি স্কুলের ছাত্র। প্রথম কবিতা প্রকাশ পায় ‘সোনার বাংলা’ পত্রিকায় ১৯৪৯ সালে। সেই থেকে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও সাহিত্য সমালোচনায় কবি আমৃত্যু লেখালেখি করেন। তার উল্লেখযোগ্য ও প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে বজ্রেচেরা আঁধার আমার, সীমান্ত শিবিরে, মূল্যবোধের জন্যে, দক্ষিণের জানালা, আরো দুটি মৃত্যু, বিমুখ প্রান্তর, আর্ত শব্দাবলী, শোকার্ত তরবারি, আমার ভিতরের বাঘ, আধুনিক কবি ও কবিতা, সাহিত্য প্রসঙ্গ। তার অনুবাদ গ্রন্থ হচ্ছে ‘হোমারের ওডিসে’।
কবি হাসান হাফিজুর রহমান বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য পাকিস্তান লেখক পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, সওগাত সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার অর্জন করেন।
কবি হাসান হাফিজুর রহমান ৫১ বছর বয়সে ১৯৮৩ সালের ১লা এপ্রিল মস্কোর সেন্ট্রাল হাসপাতালে পরলোক গমন করেছিলেন।