ঢাকা শেয়ার বাজার

৮ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার ২৩ কার্তিক ১৪৩২

দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে মার্জিন ঋণের ব্যবহার নয় কেন

সবার আগে শেয়ার বাজারের নির্ভর যোগ্য খবর পেতে আপনার ফেসবুক থেকে  “ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম” ফেসবুক পেজে লাইক করে রাখুন, সবার আগে আপনার ওয়ালে দেখতে। লাইক করতে লিংকে ক্লিক করুন  facebook.com/dhakasharebazar2024

পুঁজিবাজার ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও মানুষ অধিক লাভের প্রত্যাশায় বিনিয়োগ করে। এখানে প্রতিটি পয়সার হিসাব করতে হয় এবং ঝুঁকিকে প্রিমিয়ামে রূপান্তর করতে হয়। তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশ করাই শ্রেয়। তবুও অনেক বিনিয়োগকারী না বুঝে অন্যের পরামর্শে বিনিয়োগ করেন, যার ফলে সাময়িক সফলতা আসলেও দিনশেষে আফসোস করতে হয়।

পুঁজিবাজারে সাধারণত তিন ধরনের বিনিয়োগ হয়ে থাকে: স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন ট্রেড করেন এবং তারা ডে ট্রেডার নামে পরিচিত। অপেক্ষাকৃত বেশি সময়ের জন্য যারা বিনিয়োগ করেন তারা মধ্য মেয়াদি বিনিয়োগকারী এবং যারা এক বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য বিনিয়োগ করেন তারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী। মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্জিন ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

সাধারণত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে এবং মার্জিন ঋণ প্রদান করে। প্রতিষ্ঠান ভেদে এর সুদের হার ১০% থেকে ১৪% পর্যন্ত হয়ে থাকে, যার সাথে পোর্টফোলিও চার্জ যুক্ত হয়। একজন দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী হিসেবে এই ঝুঁকি এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিবেচনা করেই মার্জিন ঋণ গ্রহণ করা উচিত। অন্যথায় পোর্টফোলিও ‘সিক’ হয়ে যেতে পারে এবং মার্জিন ঋণ আদায়ের স্বার্থে ফোর্স সেলের আওতায় পড়ে বিনিয়োগ হারানোর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

যদি আপনি ১০% থেকে ১৪% সুদে মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেন, তবে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। প্রথমত, যে সিকিউরিটিজ আপনি ক্রয় করছেন তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা যাচাই করা জরুরি। মার্জিন ঋণের সুদের হার ১৩% হলে, সেটি ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক বা বার্ষিক হারে গণনা করা হবে কি না তা দেখতে হবে। ত্রৈমাসিক সুদের ক্ষেত্রে ইফেক্টিভ সুদের হার আরও বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও, ০.২৫% থেকে ১.০০% পর্যন্ত পোর্টফোলিও চার্জ যুক্ত হয়।

যদি আপনি ১০০ টাকা মূল্যে একটি শেয়ার ক্রয় করেন এবং ৫ বছরের জন্য ধরে রাখেন, তাহলে হিসাব করে দেখতে হবে বিনিয়োগটি যৌক্তিক হবে কি না। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে একটি কোম্পানি ১০০% ডিভিডেন্ড দিলেও ফেস ভ্যালু অনুযায়ী লভ্যাংশ পাওয়া যাবে ১০.০০ টাকা, অথচ মার্জিন ঋণের সুদ ও পোর্টফোলিও চার্জ চক্রবৃদ্ধি হারে ধার্য হবে বাজারদর অনুযায়ী। ফলে প্রাপ্ত লভ্যাংশ বিনিয়োগের খরচের তুলনায় কম হতে পারে। অধিকন্তু, দীর্ঘ সময় ধরে বাজার মন্দার মধ্যে থাকলে মূলধনী লাভের সম্ভাবনাও কমে যায়।

উপরে আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, মূলধনী লাভের নিশ্চয়তা না থাকলে বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ‘সিক’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে হলে বিনিয়োগের কৌশল ও ঝুঁকি সম্পর্কে দক্ষ হতে হবে অথবা অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নিতে হবে। অধিক লাভের আশায় মার্জিন ঋণ গ্রহণের আগে সতর্ক হওয়া আবশ্যক।

দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মার্জিন ঋণ ব্যবহার করা সাধারণত পরিহার করাই উত্তম। শেয়ারবাজারে ওঠানামা স্বাভাবিক, তবে মার্জিন ঋণের কারণে এই অস্থিরতা বিনিয়োগকারীর উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে। যদি শেয়ারের মূল্য হ্রাস পায়, তাহলে মার্জিন ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মার্জিন কল করতে পারে, যার ফলে বিনিয়োগকারীকে অতিরিক্ত অর্থ জমা দিতে হতে পারে। উপরন্তু মার্জিন ঋণের সুদের কারণে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের লাভ কমে যেতে পারে। সুতরাং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করা অধিক নিরাপদ এবং লাভজনক হতে পারে।

Author

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আপনি এটাও পড়তে পারেন
শেয়ার বাজার

আপনি এই পৃষ্ঠার কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না।