পুঁজিবাজার খুবই স্পর্শকাতর একটি স্থান, এই বাজারকে স্বাভাবিক রাখতে কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকা জরুরী। শেয়ার বাজার সম্পর্কে নেতিবাচক, ভুল ও মিথ্যা সংবাদ করার জন্যে অনলাইন পেপার গুলিকে নিয়ন্ত্রনে আনা অতীব জরুরী।
অনেক অনলাইন পোর্টাল টাকার বিনিময়ে বড় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিভিন্ন শেয়ার ও সেক্টর সম্পর্কে বিভ্রান্তি মূলক খবর প্রকাশ করে বা কখনো কখনো মিথ্যা প্রতিবেদন দেয়। যার বাজে প্রতিফলন ঘটে বাজার ও ইনডেক্সের উপর।
প্রায়ই দেখা যায় একটি কোম্পানির লভ্যাংশ বা ইপিএস ঘোষণা হবার পরে কোন পেপার আগে খবর প্রকাশ করে, ভিউ বাড়াবে এই নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। লোকমুখে কথা শুনেও খবর প্রচার করে দেয়, এমন ও দেখা যায় হেডলাইন ও মূল খবরের মাঝে কোন মিল নেই।
আবার একটি কোম্পানির লভ্যাংশ বা ইপিএস প্রকাশ করেছে তারা কোন বিজ্ঞপ্তি বা তাদের ওয়েবপেইজে খবর প্রকাশ করেনি। অথচ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল মনগড়া খবর ছাপিয়ে দিচ্ছে। এ রকম অনেক ভুল খবর প্রকাশিত হবার পরে বিভিন্ন সময় বিনিয়োগকারীগন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উদাহরণ হিসাবে গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ বিকাল ৩.৩০ মিনিটে ছিল ইউনিক হোটেল এন্ড রিসোর্ট এর ২য় প্রান্তিক ইপিএস ঘোষণা পর্ষদ সভা। কিন্তু পরের দিন লেনদেন শুরু হবার আগ পর্যন্ত সকাল ১০ টার মাঝেও ইউনিক হোটেল এন্ড রিসোর্ট তাদের ওয়েব পেইজে ২য় প্রান্তিক ইপিএস ঘোষণা পর্ষদ সভার ফলাফল জানায়নি। এমনকি সেদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নিউজ বিভাগেও খবর প্রকাশিত হয়েছিল সকাল ১০টা ৩ মিনিটে।
অথচ অনেকগুলি অনলাইন পোর্টাল খবর ছাপিয়েছিল ২৪ জানুয়ারিতে। কিসের ভিত্তিতে তারা খবর প্রকাশ করল, এই রেফারেন্স তাদের নেই।
একটি অনলাইন পোর্টাল ছাপিয়েছিল ইউনিক হোটেল চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা (রিস্টেটেড)। গত বছর একই সময়ে ইপিএস হয়েছিল ২৭ পয়সা আয় হয়েছিল। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ৭৩ পয়সা বা ২৭০ শতাংশ।
অন্যদিকে দুই প্রান্তিক মিলিয়ে ইউনিক হোটেলের ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫২ পয়সা (রিস্টেটেড)। গতবছর একই সময়ে ২৭ পয়সা ইপিএস হয়েছিল। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ১ টাকা ৫২ পয়সা বা ৪৬৩ শতাংশ।
অন্যএকটি অনলাইন পোর্টাল ছাপিয়েছিল ইউনিক হোটেল চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ২ টাকা আয় হয়েছে। গত বছর একই সময়ে ৩২ পয়সা আয় হয়েছিল।
এদিকে হিসাব বছরের প্রথম দুই প্রান্তিক তথা ৬ মাসে (জুলাই’২২-ডিসেম্বর’২২) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ৫২ পয়সা আয় হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি ৩২ পয়সা আয় হয়েছিল।
এখানে দেখা গেল প্রথম পেপারের তথ্য অনুযায়ী ২য় প্রান্তিক ইপিএস দাড়িয়েছে অক্টোবর -ডিসেম্বর ৩ মাসে ১ টাকা, আগে ছিল ০.২৭ টাকা। আর জুলাই – ডিসেম্বর ৬ মাসে ১.৫২ টাকা আগে ছিল ০.২৭ টাকা।
দ্বিতীয় পেপারের তথ্য অনুযায়ী ২য় প্রান্তিক ইপিএস দাড়িয়েছে অক্টোবর -ডিসেম্বর ৩ মাসে ২ টাকা,আগে ছিল ০.৩২ টাকা।
আর জুলাই – ডিসেম্বর ৬ মাসে ৩.৫২ টাকা আগে ছিল ০.৩২ টাকা।
এখন বিনিয়োগকারীগন কোন খবর বিশ্বাস করবে? উল্লেখ্য প্রথম অনলাইন পেপারটির খবর সঠিক ছিল।
২য় টির খবর ঠিক ছিলনা। এখানে আরো উল্লেখ্য ২য় পেপারটি ছিল একটি নামকরা অনলাইন পোর্টাল যে কারণে মানুষ ২য় পেপারের খবর দেখে সেদিন লেনদেনের শুরুতেই সেদিনের সর্বোচ্চ দামে শেয়ার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
এছাড়াও গত জানুয়ারী মাসে সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ইপিএস প্রকাশেও অনলাইন পোর্টাল গুলি আজগুবি সংবাদ পরিবেশন করেছিল ।
হেডলাইন ছিল সিনোবাংলার ২য় প্রান্তিকে ইপিএসের উস্ফোলন অথচ গত ৩ মাসে কোম্পানিটির ১ পয়সা আয় কমেছিল।
এভাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভিত্তিহীন খবর প্রকাশের ফলে বিনিয়োগকারীগন ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণে বিনিয়োগকারীগন শেয়ার মার্কেটকে গালি দিচ্ছে, মার্কেট নিয়ে দ্বিধায় পরছে।
তাই কর্তৃপক্ষের উচিত এই বিষয়টিকে নজরে আনা, যে কোন কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইটে অথবা সাংবাদিক সম্মেলন করে খবর প্রকাশিত না হওয়ার আগে, কোন কোম্পানির প্রাইজ সেনসিটিভ নিউজ কোন পেপারে প্রকাশিত করতে পারবে না। এমন নীতিতে যাওয়া উচিত। তাতে খবরের সুদ্ধতা থাকবে, বাজার নেতিবাচক প্রভাবিত হবে না, বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন।
একটি রেসপন্স
ধন্যবাদ ,ঢাকাশেয়ারবাজার পত্রিকাকে, গুরুত্বপূর্ণ একটি খবর প্রকাশ করেছেন।