ঢাকা শেয়ার বাজার

২৪ এপ্রিল ২০২৫ বৃহস্পতিবার ১১ বৈশাখ ১৪৩২

মুদ্রাস্ফীতির এই চাপের মধ্যে সঞ্চয় করতে হবে ভেবে চিন্তে

সবার আগে শেয়ার বাজারের নির্ভর যোগ্য খবর পেতে আপনার ফেসবুক থেকে  “ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম” ফেসবুক পেজে লাইক করে রাখুন, সবার আগে আপনার ওয়ালে দেখতে। লাইক করতে লিংকে ক্লিক করুন  facebook.com/dhakasharebazar2024

২০২০ সালে হটাৎ করে করোনার কারণে লকডাউন হবার পরে যখন মানুষের কাজ বন্ধ হয়ে যায় তখন মানুষ আর্থিকভাবে দারুন ভাবে কস্টের মধ্যে পরে যায়। তখন অনেক মানুষ সঞ্চয় না করে যে ভুল করেছিল সেই বিষয় অনুধাবণ করেছিলো। করোনার পরে প্রায় সব মানুষ ই কম বেশি সঞ্চয়ের প্রতি মনোনিবেশ করে।

কিন্তু রাশিয়া -ইউক্রেন যুদ্ধ লাগার পরে হটাৎ করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার চড়া হওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মানুষ। মুদ্রাস্ফীতির চাপে অনেকে সঞ্চয় ভেংগে খাচ্ছেন। তবে সামনে আরও কঠিন সময় আসতে পারে। তাই যতটুকু সম্ভব সঞ্চয় করতে হবে আমাদের। সঞ্চয় আমাদের যেমন বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করে, তেমনি আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও জোরদার করে। টাকা জমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা বর্তমান চাহিদা। সব সময় মনে হতে থাকে এই সমস্যাটা কাটুক, এরপর থেকে টাকা জমাব। সঞ্চয় করতে চাইলে এই ভাবনা দূরে সরিয়ে সমস্যার মধ্যেই সঞ্চয় শুরু করতে হবে। একবারে বড় অঙ্ক নয়, অল্প করেই জমানোর অভ্যাস করতে হবে আমাদের।

সাধারণত যে সব উপায়ে সঞ্চয় শুরু করতে পারি আমরা, তার কিছু বিশ্লেষণ দেয়া হলোঃ

ধার শোধ করতে হবেঃ
ধার নেয়া সঞ্চয়ের জন্যে সবচেয়ে বড় বাধা। দেনা থাকলে যা আয় হচ্ছে, তার একটা অংশ শুরুতেই শেষ হয়ে যায় দেনা শোধ করতে। এ কারণে দেনা থাকলে প্রথমেই সেটা শোধ করে, এরপর সঞ্চয় করা উচিত।

প্রতিদিনের হিসাব প্রতিদিনঃ
আমরা যখন আমাদের প্রতিদিনের খরচের হিসাব জানবো এবং নির্দিষ্ট স্থানে সেটা লিখে রাখব, তখন সঞ্চয় করা সহজ হবে। হিসাব থাকলে টাকার ওপর আমাদের ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণও থাকে। তাই হিসাব রাখতে হবে প্রতিদিন। প্রতিদিনের হিসাব লিখে রাখলে মাস শেষে মূল গড় হিসাব করা যায় কোন খরচ টা না করলেও অসুবিধে নেই।

বিলাশ দ্রব্য, চাহিদা ও প্রয়োজনের পার্থক্য বুঝতে হবেঃ
আমরা কোন কিছু না ভেবেই হঠাৎ যে খরচ গুলো করি, সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে সেটাই বড় বাধা। সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রথমেই দেখতে হবে, কোন জিনিসটা আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, আর কোন চাহিদাটা পরেও পূরণ করা যাবে। কোনো কিছু ভালো লাগলে হুট করে সেটা কিনে ফেলার সিদ্ধান্ত নিই। যেমন কখনো হয়তো মনে হলো বড় আকারের একটা ফ্রিজ কিনলে খুব ভালো হতো। কিন্তু তখনই আমাকে নিজেকে এই প্রশ্ন করতে হবে, ‘আমার আয় কত?’ এই শখ আমার জন্যে সঞ্চয় থেকে কি পরিমাণ টাকা কমাবে, সেটা মনে করিয়ে দেবে। বড় ফ্রিজটি এখন আমার আদৌ কেনা জরুরি কি না। সেই ভাবনা এনে দেবে। যখন আমার হাতে যথেষ্ট টাকা থাকবে, সঞ্চয় থেকে খুব বেশি ভাঙতে হবে না, তখন ফ্রিজ টি কেনার কথা ভাবা যায়।

স্মার্ট ডিজিটাল কার্ডের পরিবর্তে ক্যাশ ব্যবহার করাঃ
ইদানিং আমাদের কম বেশি সবার কাছে স্মার্ট ডিজিটাল ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থাকে। খরচ করার সময় যতটা সম্ভব কার্ড এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, এতে খরচের মানসিকতা বাড়ে। ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটায় মাস শেষে বিল দিতে দেরি হলে নানা ঝামেলা হয়। কিন্তু ক্যাশ টাকায় কেনাকাটার ক্ষেত্রে এসব ঝামেলা নেই, আর খরচ করার সময়েও মানিব্যাগের ঠিকঠাক হিসাব থাকে। ক্যাশ না থাকলে তখন ডেবিট কার্ড ব্যাবহার করা যেতে পারে। তবে প্রয়জনে ও জরুরী প্রয়জনের জন্যে স্মার্ট ডিজিটাল কার্ড থাকা উচিৎ।

বিনিয়োগ গুরু ওয়ারেন বাফেট এর সূত্র অনুযায়ী আগে সঞ্চয়, পরে খরচঃ
আমার উপার্জন যাই হোক না কেন মাসের শুরুতেই সেটাকে একটা অনুপাতে ভাগ করে ফেলুন। ৬০ ভাগ টাকা অতি প্রয়োজনীয় খরচের জন্যে (বাড়িভাড়া, প্রয়োজনীয় অন্যান্য খরচ, খাবার ইত্যাদি) জন্য বরাদ্দ রাখি, বাকি ২০ ভাগ রাখি অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের জন্য, আর ২০ ভাগ রাখতে পারি সঞ্চয়ের জন্য। এই অনুপাত মন মতো না হলে নিজের মতো বণ্টন করে নিন। তবে মাসের শুরুতেই কিছু টাকা খরচের আগেই সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা আমাদের অতীব জরুরি।

জেনে, বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে ভিন্ন ভিন্ন খাতেঃ
সঞ্চয়ের পাশাপাশি কোথায় বিনিয়োগ করা যায়, সেটা নিয়ে ভাবা যায়, বিনিয়োগ করতে পারলে ভালো হয় । তাতে কিছু বাড়তি টাকা আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বুঝে শুনে বিনিয়োগ করতে হবে। কেননা অল্প সময়ে টাকা দ্বিগুণ করার মতো বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে বিনিয়োগে উৎসাহী করা অনেক প্রতিষ্ঠান আজকাল আছে।

কখনোই সে সব জায়গায় বিনিয়োগ করা উচিত নয়। শুরুতে অল্প টাকা বিনিয়োগ করা উচিত। আর থাকতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। যেমন হতে পারে সেটা ছোট কোনো ব্যবসা, শেয়ার মার্কেট বা বন্ড। তবে অল্প পরিমাণে করা উচিত, যাতে লোকসান হলেও বড় কোনো বিপদে না পড়তে হয়। তবে না জেনে না বুঝে শেয়ার মার্কেটে না আসাই উত্তম।

দৈনিক বাজার খরচ কিভাবে কমানো যায়ঃ
প্রতি মাসে সংসারে যা অবশ্যই কেনাকাটা প্রয়োজন। মাছ-মাংস শাক সবজি বাদে অন্য সব কিছু এক সাথে কিনে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। বারবার কিনতে গেলে খরচ বেশি হয়। তাছাড়া কোথাও ছাড় থাকলে সেখান থেকে জিনিসপত্র কেনার চেষ্টা করতে পারি। তবে ছাড়ে কিনতে গিয়ে আবার দরকারের চেয়ে বেশি কেনা যাবে না। এভাবে মাসিক বাজার থেকে কিছু টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। মাস শেষে  তালিকা থেকে কিভাবে কাটছাট করা যায়, হিসাব নিকাশ করে দেখা যায়।

ধার করে উপহার দিবেন নাঃ
সামাজিকতা রক্ষার জন্যে বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে কাছের মানুষদের আমরা উপহার দিয়ে থাকি। সেই উপহার দেওয়ার আগে অবশ্যই বাজেট করা উচিত। নিজের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেট করাই ভালো। ধার করে সামর্থ্যের চেয়ে দামি উপহার দিয়ে, নিজের পকেটে টান ফেলার কোনো মানেই হয় না। একবারে সবাইকে দিতে না পারলে ভাগ ভাগ করে দিন। প্রয়োজনে কম দামের উপহার দিন। মনের ভুলেও ধার করে উপহার দেয়া যাবেনা।

অন্য লোকের কথায় কান দেয়া যাবেনাঃ
ইদানিং হিসেব করে চলার কারণে অনেক সময় কাছের লোকজনের কাছে শুনতে হয় ‘হিসেবি’ বা ‘কিপ্টে’,কিন্তু সঞ্চয় করা আর নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন কোনো লজ্জার বিষয় না। কারণ, বেহিসেবি খরচ করে তাৎক্ষণিক বাহবা পেলেও অসময়ে বিপদ আপদে কাউকে পাশে পাওয়া যায় না, এটা চরম পরীক্ষিত। তাই লোকের কথায় কান না দিয়ে সঞ্চয়ী হতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

সোআপ করার জন্যে বাহিরে খাওয়া বন্ধ করাঃ
প্রায়ই আমরা বাইরে খেতে ভালোবাসি। আবার কর্মক্ষেত্রে বাসা থেকে বহন করতে লজ্জা লাগে বলে, বাইরে থেকে খাবার কিনে খাই। কিন্তু এটা অনেক খরচ বাড়ায়, কিন্তু বাসা থেকে খাবার নিলে অর্থ সাশ্রয় হবে, আবার স্বাস্থ্যকরও হবে। ঘরে তৈরি করলে খাবারের খরচও কমে আসবে। অফিসে খাবারের ব্যবস্থা থাকলে সেটা যে রকমই হোক খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কোন সময়ই সোআপের জন্যে নামকরা বাফেট খাওয়া ঠিক না।

হাতের শেষ সম্ভল হাতছাড়া করা যাবেনাঃ
সব সময় বিকল্প কিছু ভাবনা মাথাতে রাখতে হবে। বর্তমানে যে কাজ করছি, এটা না থাকলে আমি কি করবো? সেই প্লানটাও রাখতে হবে। কখনো হাতের শেষ সম্বল হাতছাড়া করা যাবে না।

Author

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আপনি এটাও পড়তে পারেন

4 Responses

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

শেয়ার বাজার

আপনি এই পৃষ্ঠার কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না।