বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত সপ্তাহে মূল্যস্ফীতি নিয়ে হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিবিএসের সবশেষ হিসাব অনুসারে, মার্চে মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯.৮১ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯.৬৭ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্য বলছে, মার্চে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় মূল্যস্ফীতিই বেড়েছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯.৮৭ শতাংশ, আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.৬৪ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৯.৪৪ ও ৯.৩৩শতাংশ।
নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি চাহিদা তাড়িত নয়; এটি বাড়তি উৎপাদন খরচতাড়িত মূল্যস্ফীতি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি কমলেও , বাংলাদেশে কমছে না।
বিভিন্ন বিশ্লেষকদের মতে ,প্রাথমিক পণ্য ও কাঁচামালের আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমতে সময় লাগবে। বিভিন্ন বিশ্লেষকদের মতে মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে গ্যাস–বিদ্যুতের দাম কমাতে হবে,তা নাহলে মূল্যস্ফীতি কমানো চ্যালেঞ্জিং হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এটি একধরনের করের মতো, যা ধনী–গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ বাড়ায়। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি বাড়লে গরিব ও মধ্যবিত্তের সংসার চালাতে ভোগান্তি বাড়ে। এমনিতেই বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া। তার সঙ্গে চিকিৎসা, পরিবহনসহ খাদ্যবহির্ভূত খাতেও খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ।
মূলত মার্চে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় ধরনের মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল গত মাসে রোজা উপলক্ষে নতুন করে চাল, আলুসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছিল।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে গ্রামের তুলনায় শহরে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি ছিল। এ মাসে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৬৮ শতাংশ। আর শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯৪ শতাংশ। মার্চে শহরাঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯.৯৮ শতাংশে ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯.৭১ শতাংশে ওঠে। গ্রামাঞ্চলে মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৮৬ শতাংশ, আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯.৪১ শতাংশ।
আয় বেশি বাড়লে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও তা কিনতে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু দেশেদেড় বছর ধরে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার কম। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, মার্চে জাতীয় মজুরি হার ছিল ৭.৮ শতাংশ, এর মানে মূল্যস্ফীতি যে হারে বেড়েছে, মজুরি সেই হারে বাড়েনি। গ্রাম–শহর নির্বিশেষে ১৪৫টি নিম্ন দক্ষতার পেশার মজুরির ওপর হিসাব করে থাকে বিবিএস।
মজুরিনির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি পড়ে। বিবিএস বলছে, দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। দেশে এরকম কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ছয় কোটি মতো।
আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি বাড়লে গরিব ও মধ্যবিত্তের সংসার চালাতে ভোগান্তি বাড়ে। এমনিতেই বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া। তার সঙ্গে চিকিৎসা, পরিবহনসহ খাদ্যবহির্ভূত খাতেও খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ।
ঢাকা শহরের ১৭ টি এলাকার বাজার ঘুরে, প্রায় ১৫০ সাধারণ মানুষের সাথে রোজার সময় আমাদের প্রতিনিধিরা কথা বলেছেন, প্রায় সবারই একই কথা ছিল মূল্যস্ফীতির চাপে তারা এত নাকাল আর কখনো হয়নি।
Author
-
'ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম' একটি নির্ভরযোগ্য শেয়ার বাজার ভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল। অর্থ ও বাণিজ্য, রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি, প্রতিবেদন, বিশ্লেষণমূলক লেখা প্রকাশ করে।
View all posts
'ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম' শেয়ার মার্কেটের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সততার সহিত পরিবেশন করে এবং কোন সময় অতিরঞ্জিত, ভুল তথ্য প্রকাশ করেনা এবং গুজব ছড়ায়না, বরং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে বদ্ধ পরিকর। এটি একটি স্বাধীন, নির্দলীয় এবং অলাভজনক প্রকাশনা মাধ্যম।
একটি রেসপন্স