রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ‘স্থানীয় লোকজনের হামলা ও পুলিশের গুলির’ প্রতিবাদে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
এর আগে আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা পৌনে ১১টার পর শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি প্যারিস রোডে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
সেখান তাঁরা এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘এসো ভাই, এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’, ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘পুলিশের হামলা কেন, সন্ত্রাসীদের হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘টোকাইদের কালো হাত, ভেঙে দাও-গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের একপর্যায়ে প্যারিস রোডে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার উপস্থিত হন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের শান্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানালে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
বিক্ষোভ থেকে প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকটি দাবি সামনে এনেছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সদস্যদের বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত ব্যক্তিদের প্রবেশ বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিক করা, আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
গতকাল শনিবার বগুড়া থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে বাসের আসনে বসাকে কেন্দ্র করে চালক ও চালকের সহকারীর সঙ্গে এক শিক্ষার্থীর কথা-কাটাকাটি হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছালে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে আবার বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় স্থানীয় এক দোকানদার এসে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জড়ো হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তখন শিক্ষার্থীরাও তাঁদের পাল্টা ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
দফায় দফায় এ সংঘর্ষে স্থানীয় মানুষের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর এলাকায় দোকানে ও পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি সাত প্লাটুন বিজিবি কাজ করছে।
গতকাল ঘটনার পর আজ সকালে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।