বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে গার্ড অব অনার দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) হেদায়েতুল ইসলাম।
নানান দিক দিয়ে, নানা বিবেচনায় ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী মানুষের মনে অমর হয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন সমাজবিদ, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তারা এসব কথা বলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাশেদ খান মেনন বলেন, জাফরুল্লাহ ভাই আমার ছাত্রজীবনের সহযোদ্ধা থেকে মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা ছিলেন। এই দীর্ঘ সময় মানুষের শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমাদের যে লড়াই সেই লড়াইয়ে তিনি পাশে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার অর্থেই জনযোদ্ধাই ছিলেন তিনি। তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধ শেষ করেননি। এরপরও তিনি মুক্তিযুদ্ধের লড়াই চালিয়ে গেছেন। শুধু দেশের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তার লড়াই ছিল অবিচল। আমাদের দেশের ওষুধ নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তার প্রচেষ্টাতেই আমরা এটিতে লাভবান হচ্ছি। তিনি রাজনীতি করেননি ঠিকই, কিন্তু রাজনীতিতে বিবেকের কণ্ঠস্বর হিসেবে তিনি থেকেছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এই বিদায় আমাদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে এক বিরাট ক্ষতির কারণ। তিনি শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, ডাক্তারও ছিলেন না, তিনি আমাদের ইতিবাচক পরিবর্তনে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। বাঙালি জাতিকে পৃথিবীতে বাঙালি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা জ্ঞান-বিজ্ঞানে জাতিকে ভূষিত করা এবং পৃথিবীর সব মহান কাজে তিনি অগ্রসৈনিক ছিলেন। তার প্রতি আমি আমার ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা জানাই। ষাট বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি উনাকে চিনি। তার পরিবারে আমি গিয়েছি। তার পিতামাতার সঙ্গে আমি খেয়েছি। ভাইবোনের সঙ্গে কথা বলেছি। এ এক অসাধারণ পরিবার। অসাধারণ এর মধ্যে অসাধারণ জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আ স ম আব্দুর রব বলেন, ডাঃ জাফরুল্লাহ প্রতি আমাদের ঋণ অপরিসীম। তার ঋণ কোনোদিন পরিশোধ হবে না। তার প্রতি জাতির কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা উচিত। বাংলাদেশে আরেকটা জাফরুল্লাহ তৈরি হবে না। আমরা যারা গরীব-মেহনতি মানুষের পক্ষে রাজনীতি করি এর বাইরেও সর্বস্তরের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। তার আগেও তিনি মুক্তিযুদ্ধের যেই চেতনা, সমাজ পরিবর্তন ও রাষ্ট্র সংস্কার সেই চেতনা তিনি ধারণ করতেন। ১৬ ডিসেম্বরের পরে তিনি উপলব্ধি করলেন, মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়নি, তার আরও কাজ আছে। বিশেষ করে দুটি ক্ষেত্রে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অসামান্য অবদান রয়েছে। তার একটি হচ্ছে স্বাস্থ্য, অপরটি শিক্ষা। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করেছেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে গণবিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছেন। তিনি নারীদের উন্নয়নের জন্যও কাজ করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মধ্যে শতকরা চল্লিশ ভাগ নারী। তিনি সামাজিক মালিকানায় বিশ্বাস করতেন। আর এটি আমাদের দেশে অনন্য দৃষ্টান্ত। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমাদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছেন। আমাদের মুক্তিযু্দ্ধ যত অগ্রসর হবে, ততই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মৃতি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।