গত ২ বছর ধরেই দেশের শেয়ার বাজারে চলছে অস্থিরতা। চলতি বছরে অস্থিরতা আরও প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নানান উদ্যোগের পরেও যেন কোন কূলকিনারা হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইজ থাকার পরে সম্প্রতি ৬ কোম্পানি বাদে বাকি সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইজ উঠে যাওয়ার পরে বাজারের পতন থামানো যাচ্ছেনা।
ফ্লোর উঠে যাওয়ার পরে নাকাল বিনিয়োগকারীরা, শেয়ার বাজার ও তার সংশ্লিষ্টরা। কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছেনা।
যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান কমিশনের অধীনে পুঁজিবাজারের অনুকূলে বেশ কিছু নিয়মকানুন আরোপ করা হয়েছে। অনেক অনিয়মও বন্ধ হয়েছে।
যা বাজারের জনকল্যাণকর, এর জন্যে কমিশনের প্রতি অনেকেরই কৃতজ্ঞতা বোধ রয়েছে। কিন্তু তারপরেও বহু অনিয়ম শেয়ার বাজারে বিদ্যমান। বাজারের সুশাসন ফিরিয়ে আনার জন্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আরো জোড়ালো ভূমিকা রাখার প্রয়োজন।
বিনিয়োগকারীরা এখন আর শুনতে চাইছেনা, ইন্ডেক্স কত যাবে, ট্রেড কত হাজার কোটি টাকা হবে ইত্যাদি। মানুষ চাইছে স্বাভাবিক ও গতিময় বাজার। যে বাজারে মানুষ আস্থা নিয়ে বিনিয়োগ করবে নিশ্চিন্তে।
কর্তৃপক্ষ বাজারের সব অনিয়ম দূর করুক। ভুয়া ইপিএস, ন্যাভ, মিথ্যা উৎপাদনের খবর, অযৌক্তিক লভ্যাংশসহ নানা রকম কারসাজি এগুলো বন্ধ করুক।
সারাবিশ্বের পুঁজিবাজারে সিন্ডিকেট আছে, সিন্ডিকেট বাজারেই অংশ বটে। তবে তাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার, যাতে অতি মাত্রার ক্ষতির কারণ না হয় এই সিন্ডিকেট। এরই প্রেক্ষিতে দেশের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ শিক্ষা ও সচেতনতাও জরুরি।
পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ারের জোগান বাড়াতে হবে। অযোগ্য কোম্পানি যাতে বাজারে না আসতে পারে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে কমিশনকে। ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে মানুষ আস্থা পাবে। তাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্র বাড়বে, বড় হবে বাজার।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কমিশনের জন্যে করার রয়েছে অনেক কিছু। তালিকাভুক্ত ভুঁইফোড় ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম বন্ধ করা প্রয়োজন। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনাসহ অডিটে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য দেশের অনেক ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। তাদেরকে কীভাবে তালিকাভুক্ত করা যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। নতুন কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসা প্রয়োজন। তাই বলে দুর্বল ও কম মানসম্পন্ন কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত না করাই উত্তম।
দেশের বিনিয়োগকারীরা কর্তৃপক্ষের কাছে চায় একটি দুর্নীতিমুক্ত শেয়ারবাজার। বাজারে সুশাসন থাকলে, আপন গতিতে বাজার গতিশীল হবে। বলাই বাহুল্য দেশের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ শিক্ষা ও সচেতনতাও জরুরি।
না বললেই নয়, বাজার গতিশীল থাকলে শেয়ার বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। পাশাপাশি দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হবে। দেশের ভেতরেই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার মত অনেকেরই অনেক টাকা আছে।
দেশের বেশিরভাগ লোকের মধ্যে শেয়ার বাজার নিয়া ভীতি ও কিছু ভুল ধারণা আছে। সুশাসন ফিরে এলে মানুষের ভীতি ও ভুল ধারণা দূর হয়ে যাবে। বাজার হবে ত্বরান্বিত ও গতিশীল। যা শেয়ারবাজার, দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর।
পরিশেষে বলব পুঁজিবাজারে পুরোপুরি সুশাসন ফিরিয়ে আনলে ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে, অচিরেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বে স্থান করে নিতে পারবে।