বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করছি দীর্ঘ দিন ধরে। বাজারের মুনফা করতে এসে কান নিয়েছে চিলে আর বানরের রুটি ভাগের দৃশ্য দেখেই যেন কেটে গেল বহুকাল। ফুটো কলসির কথা না হয় আর নাইবা বলি।
কথায় কথা বাড়ে, কথায় কথা হয়। আমি মনে করি বেশি কথা হওয়া উচিত শুধুমাত্র উন্নত কাজের জন্য, আর সেটাই কর্মক্ষেত্র বা ব্যাবসা ক্ষেত্রে। কান, বানর, ফুটো কলসি বাদ দিয়ে আজ বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলি।
শুরুতেই একটা কথা বলি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হিসেবে যা আমার ভূয়োদর্শন। শেয়ার বাজারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এমন কোন কথা বলা উচিত নয়, যে কথার ফলে শেয়ার বাজারে সরসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রথমেই বলতে হয় শেয়ার বাজার খুবই সেন্সটিভ একটি ক্ষেত্র। তাই মার্কেট নিয়ে অনুমান নির্ভর মনগড়া মন্তব্য দেয়া ঠিক না।
শেয়ার বাজার সম্পর্কে নেতিবাচক, ভুল ও মিথ্যা নিউজ করার জন্যে অনলাইন পেপার গুলিকে নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে। অনেক অনলাইন পোর্টাল টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন শেয়ার ও সেক্টর সম্পর্কে বিভ্রান্তি মূলক খবর দেয়, বা কখনো কখনো মিথ্যা প্রতিবেদন দেয়। যার বাজে প্রতিফলন ঘটে বাজার ও ইনডেক্সের উপর।
কোম্পানির ফিনান্সিয়াল রিপোর্ট যাতে সঠিকভাবে করে সে ব্যাপারে চার্টার্ড ফার্ম গুলিকে নির্দেশনা দেয়ার জন্যে কাজ করতে হবে। কেননা কমিয়ে, বাড়িয়ে সুবিধা মত ফিনান্সিয়াল রিপোর্টের জন্যে মানুষ বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অনেক সময় অনেক কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে অডিটররা জড়িত থাকেন। এ ক্ষেত্রে অডিট ফার্ম গুলিকে কঠোর শাস্তির আওতাধীন করা উচিত। যারা বানোয়াট তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট প্রকাশ করবে। তা প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
কোন শেয়ার নিয়ে যাতে নোংরা গেইম না করতে পারে সেজন্যে যথাযত ব্যবস্থা নিতে হবে। কোন শেয়ার অস্বাভাবিক গেইম হয়ে যাওয়ার পরে তদন্ত করে, লাভ কি? বরং এর ফলে মানুষ বিভ্রান্তিতে পরে। আর কোন কোম্পানি নিয়ে তদন্ত করবে সেটা প্রকাশ্যে না বলে গোপনীয়তার সাথে করা উচিত। তাতে বাজারে আতংক ছড়াবেনা।
বিভিন্ন কোম্পানির প্রাইজ সেনসেটিভ নিউজ (মূল্য সংবেদনশীল তথ্য) অনেক আগেই প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ লোক জনের মাধ্যমে। এর সঙ্গে কোম্পানির পরিচালক, কর্মকর্তারাও জড়িত। তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে তথ্য প্রকাশ না করে, তারা নিজেরা ও এক শ্রেনির বড় বিনিয়োগকারীদের সাহায্যে শেয়ারের ক্রয়ের চাপে, দাম বাড়িয়ে তুলছেন।
এতে কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা ও কিছু ব্যাক্তি লাভবান হলেও লোকসান গুনছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। একটি কোম্পানির ভালো নিউজ আনুষ্ঠানিক ভাবে আসার আগেই, খবরটি একটি পক্ষ জেনে দাম বাড়িয়ে দেয়। আনুষ্ঠানিক ভাবে ভালো নিউজ আসার পরে কিছু লোক তাতে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। নিজেদের মত করে প্রাইজ সেনসেটিভ নিউজ প্রকাশ করায় মার্কেটে শেয়ার ভালোর বদলে, ফিডিং হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া খবর আসছে, গুজব ছড়িয়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেন না অনেক কোম্পানি। অনেক ক্ষেত্রে দেরি করে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা হয়। আবার মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করার অনেক আগেই জানতে পারেন কিছু বিনিয়োগকারী। এসব ক্ষেত্রে কোম্পানির লোকজন এমনকি পরিচালকরাও জড়িত থাকেন।
বাজারের আস্থা ও মান ধরে রাখার জন্য, নীতিনির্ধারকদের সুশাসন জরুরী একান্ত জরুরী। মার্কেট আস্থাশীল ও সুবিনিয়োগ উপযোগী করার জন্যে অনেক কিছুর পাশাপাশি এই বিষয়গুলি যথাযত কর্তৃপক্ষের কঠিন নজরদারি করা উচিত।
আসুন আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারী হিসেবে কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও নজরে দেয়ার জন্যে আমরা যতটা সম্ভব পোস্ট টি শেয়ার করার চেস্টা করি। আমরা সজাগ হই এবং অন্যদের সজাগ করি।
লিখেছেন
শেয়ার বাজার বিনিয়োগকারী
মোবারক হোসেন
বসুন্ধরা, ঢাকা।
16 Responses
খুবই সময়োপযোগী লেখা।
মনের কথা বলেছেন ভাই,বাজার ভালো করতে সুশাসন খুব জরুরী।
বাজারের অনিয়মগুলি রুখে দিতে হবে।নাহয় এই বাজার কখনো সাভাবিক হবেনা।এই বাজারে এত এত চোর বাটপার থাকলে কিভাবে শেয়ার মার্কেট ভালো হবে।
একটি বিষয় ভেবে পাইনা দুর্নীতিবাজরা এত টাকা দিয়ে কি করে ।
মোবারক ভাই আপনার আরটিকেল টি খুবই ভালো হয়েছে,দারুন সময়োপযোগী লেখা লিখেছেন।
খুব ভাল লেখা, আশাকরি sec এর টিনের চষমা খুলবে
বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে
বাজারে সুশাসন ফিরিয়ে নিয়ে আসলে সব চেয়ে বড় উপকার হবে প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের।বাজারে সুশাসন থাকলে মানুষের আস্থা বাড়বে বাজারের প্রকৃত সুশাসন থাকলে বাজারে ফান্ডের অভাব হবেনক,মানুষ ভয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করছেন না,আসলে বিগত বছরগুলিতে অন্তত ১০০ এর উপরে আজেবাজে কোম্পানি লিস্টেড হবার কারণে বাজারের মেরুদণ্ড ভেংগে গিয়েছে।তাই বাজারের উন্নয়ন করতে কঠোর হতে হবে।
লেখক এর সব কথা গুলি আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীগনের মনের কথা।আশা করব করতৃপক্ষের গোচরে আসবে সংবাদ টি।
অনেকদিন পরে একজন বিনিয়োগকারীর অত্যান্ত সুন্দর গোছানো সময়োপযোগী লেখা দেখতে পেলাম।
ধন্যবাদ ঢাকা শেয়ার বাজারকে বিনিয়োগকারীদের মনের কথা লেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্যে।
শেয়ার বাজার নিয়ম কানুন মেনে ভালো ভাবে পরিচালিত হলে আমাদের মতো অনেক মহিলা এফডিয়ার না করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করত।আমার জানামতে বাজারে হাতেগোনা ৪০/৫০ টি কোম্পানির ভীত শক্তিশালী, আর বেশিরভাগ কোম্পানি কম মান সম্পন্ন যাদের নগদ লভ্যাংশ দেয়ার ক্ষমতা নেই।শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার কারণে বাজারে সুশাসন ফিরে আসছেনা যা সত্যিই দুখঃজনক।বাংলাদেশের শেয়ার বাজার উন্নয়ন এর জন্যে সবচেয়ে প্রথম যে কাজ করতে হবে তা হলো সব অনিয়ম গুলি বন্ধ করতে হবে।
আপনিও লেখা দিন ,আপনার কথাগুলি খুব ই সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ ,আপনার কমেন্ট টি প্রকাশ করতে চাচ্ছি আপনি যদি চান।
Irregularities must be stopped to improve the stock market, otherwise the market will increase quickly and the market will fall quickly
শেয়ার বাজারে সুশাসন থাকলে আমরা যারা সিনিয়র সিটিজেন তারা নিশ্চিতে রিটারডমেন্টের কিছু টাকার শেয়ার কিনতে সাহস পেতাম।বর্তমান বাজারের অস্থিরতা দেখা বিনিয়োগ করতে আমরা ভয় পাচ্ছি,শেয়ার বাজারের প্রতি মানুষের এই ভয় দূর করতে হলে বাজারকে ঢেলে সাজাতে হবে সব দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।
আমাদের দেশের শেয়ার বাজার অপার সম্ভাবনাময় ,শুধুমাত্র দুর্নীতি রুখে দিতে পারলে একদিন উন্নত মার্কেট পাব আমরা ।
চমৎকার ও সময় উপযোগী একটা বাস্তব লেখা
এই লেখাটা পরে অনেক কিছু বুঝতে পারলাম। এগুলি বাস্তবায়িত হওয়ার জরুরী
লেখাটি খুবই ভালো লাগলো👌🏽👌🏽ইনফরমেটিভ
ভাল লেখা