বিশ্বজুড়েই ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মতে বিশ্বের প্রায় ৪২ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।বাংলাদেশে এই সংখ্যা প্রায় ৮৪ লাখ।
ভুল পথে ডায়াবেটিস চিকিৎসা :
বিশ্বজুড়ে ডায়বেটিস রোগীর মধ্যে টাইপ–২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি (৯০–৯৫ শতাংশ)। আরও ভয়াবহ তথ্য হলো – প্রতি ৩ জনে ১ জন প্রি–ডায়াবেটিক কন্ডিশনে আছে। ভবিষ্যতে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে।
খোদ আমেরিকাতে ১৯৫৮ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ডায়াবেটিস ০.৯৩% থেকে ১১.৩% এ দাঁড়িয়েছে। প্রতি ৩ জনে ১ জনের প্রি–ডায়াবেটিস! এত রিসার্চ, এত ঔষধ – কিন্তু ডায়াবেটিসকেন বাড়ছে রকেট গতিতে।

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ভুল পথে হাঁটছে ডায়াবেটিস চিকিৎসা। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যর্থ। পৃথিবীতে একজন ডায়াবেটিস রোগী নাই, যিনি প্রচলিত চিকিৎসায় ভাল হয়েছেন। বরং প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডায়াবেটিক কন্ডিশন দিনদিন খারাপের দিকে যায়।
প্রচলিত চিকিৎসা ডায়াবেটিস রোগের সিম্পটম উপশমের চেষ্টা করে। কিন্তু এ সমস্যার মূলকারণ (Root Causes) পুরো উপেক্ষিত থাকে। সিম্পটম ধামাচাপার অপচেষ্টা না করে রোগের মূলোৎপাটন করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রিভার্স করে।
ইনসুলিন কি?
ডায়াবেটিস কেন ও কিভাবে হয় তা জানতে হলে ‘ইনসুলিন‘ এর ফাংশন বুঝতে হবে। ইনসুলিন এক ধরনের হরমোন যা আমাদের অগ্ন্যাশয় (Pancreas) তৈরি করে।
ইনসুলিনের কাজ:
শক্তি উৎপাদনের জন্য রক্ত হতে গ্লুকোজ কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে সাহায্য করা, অতিরিক্ত গ্লুকোজ লিভার গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা করতে উদ্ভুদ্ধ করা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্লুকোজ ফ্যাট হিসেবে (adipose tissue) জমা করতে সহায়তা করা, রক্তের গ্লুকোজ লেভেল নরমাল পর্যায়ে রাখা।
ইনসুলিন এর সহায়তা ছাড়া রক্ত হতে গ্লুকোজ শরীরের বিভিন্ন কোষে প্রবেশ করতে পারেনা। অর্থাৎ ইনসুলিন কোষে গ্লুকোজ প্রবেশের দরজার লকের চাবি হিসেবে কাজ করে। সুস্থ ব্যক্তির শক্তি উৎপাদনের জন্য যতটুকু গ্লুকোজ প্রয়োজন, কেবল ততটুকুই কোষে প্রবেশ করে। কিন্তু সরবরাহকৃত অতিরিক্ত গ্লুকোজ (কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার হতে) ইনসুলিনের সহযোগিতা তা বডি ফ্যাট টিস্যুতে ট্রাইগ্লিসারাইড (টিজি) হিসেবে জমা হয়। মূল কথা হচ্ছে, ইনসুলিন যে কোন উপায়ে রক্ত হতে অপসারণ করতে সদা তৎপর।

আমরা খাবার গ্রহণ করার পর রক্তের গ্লুকোজ লেভেল বেড়ে গেলে প্যানক্রাস ইনসুলিন সিক্রেট করে। রক্তের গ্লুকোজ লেভেল কমে আসলে ইনসুলিন সিক্রেশনও কমে যায়।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের শরীরে ইনসুলিন যথাযথ ফাংশন করতে পারে। কিন্তু কোন কারণে কোষে ইনসুলিনের সেনসিটিভিটি কমে গেলে ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স‘ বিল্ড–আপ করে। তখন ইনসুলিন চাবি দিয়ে কোষের লক খুলতে চায় না এবং ফলে কোষে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ প্রবেশ করতে পারে না। এই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এর কারণেই পর্যায় ক্রমেডায়াবেটিস (টাইপ–২) সৃষ্টি হয়।
লিখেছেন
ইঞ্জিনিয়ার সফিকুল ইসলাম
২য় পর্ব পড়তে – এখানে ক্লিক করুন, ডায়াবেটিস রিভার্স করার উপায় (পর্ব-২ )