চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য সব ধরনের নীতি সুদহার আবারও বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে বাড়বে আমানত ও ঋণের সুদহারও। গত ২২ নভেম্বর বুধবার পুনর্গঠিত মুদ্রানীতি কমিটির প্রথম সভায় এসিদ্ধান্ত হয়। নীতি সুদহার বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত আজ সোমবার (২৭ নভেম্বর )থেকে কার্যকরহবে বলে জানানো হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছিল।
এইবার নীতি সুদহার বাড়ানোসহ মুদ্রানীতি কমিটির সভায় নতুন চারটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রথমত, রেপো রেট একবারে দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো হবে। এখন নীতিসুদহার ৭.২৫ শতাংশ, তা বৃদ্ধি করে ৭.৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রীয়ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করে, তার সুদহার বাড়বে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতেরাখা আমানত ও ব্যাংকঋণের সুদহারও বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরওসংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের পথে হাঁটছে।
দ্বিতীয়ত রিভার্স রেপো (বর্তমান নাম স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি–এসডিএফ) নিম্নসীমার সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫শতাংশ করা হয়েছে। বাজারে উদ্বৃত্ত টাকা থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক রিভার্স রেপোর সুদবাড়িয়ে তা তুলে নেয়।
তৃতীয়ত, নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্পেশাল রেপো বা এসএলএফ–স্টান্ডিং লেন্ডিংফ্যাসিলিটির সুদহার ৯.২৫ শতাংশ থেকে ০.৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯.৭৫ শতাংশ করাহয়েছে। এ ব্যবস্থায় সংকটে পড়া ব্যাংক উচ্চ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে।
চতুর্থত, যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, সেই স্মার্ট বা সিক্সমান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিলের সুদ ০.২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো। এখনস্মার্ট রেট ৭.৪৩ শতাংশ, ব্যাংকগুলো এর সঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ যুক্ত করতে পারে।নতুন সিদ্ধান্তে ৩.৭৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ যুক্ত করতে পারবে ব্যাংকগুলো। তাতে ব্যাংকঋণেরসর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১.১৮ শতাংশ।
এ ছাড়া ডলারের বিনিময় হারকে বাজারমুখী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান প্রচেষ্টা জোরদার ও ভবিষ্যতে ও তা অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য এত দিন মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের হার বাড়লে মানুষ সাধারণত ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত হন।
তিন মাস ধরেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর(বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৫৬ শতাংশ, যাগত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়ে ৯.৯৩শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, পুনর্গঠিত মুদ্রানীতি কমিটির প্রথম সভা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, প্রধানঅর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান, অর্থনীতিবিদ সাদিক আহমেদ, বাংলাদেশ উন্নয়নগবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরঅর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহীপরিচালক মো. এজাজুল ইসলাম অংশ নেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান সামষ্টিকঅর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ গতি–প্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ ছাড়াবিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি, বিনিময় হার, তারল্য ও সুদহার পরিস্থিতি এবং নীতিসুদহারের গতিবিধি নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদেরগৃহীত পদক্ষেপসমূহ, যেমন নীতি সুদহার বৃদ্ধি, আমানত ও ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলেদিয়ে তা বাজারমুখী করা, টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ প্রদান স্থগিতকরণ, আমদানি ব্যয়নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হারকে বাজারমুখী করা, আমদানি মূল্য যাচাইসহ বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে তদারকি বৃদ্ধি এবংবাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ থেকে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের আমদানিব্যয় মেটানোর ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে কমিটির সদস্যদের অবহিত করে।