কথিত আছে শায়েস্তা খানের আমলে জিনিসপত্রের দাম অত্যন্ত সস্তা ছিল, যা আজও একটি কিংবদন্তি। তার সময়ে এক টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। এই সস্তা দামের কারণে তার শাসনকাল স্মরণীয় হয়ে আছে, বিশেষ করে যখনই পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তখন মানুষ এই আমলের কথা বলে। এই সস্তা দামের বিষয়টি বাংলার মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খানের একটি উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে ১ টাকায় কোন খাদ্যদ্রব্য না পাওয়া গেলেও ১ টাকা এমনকি এক টাকার কম পয়সা দিয়েও মিলছে দেশের শেয়ার বাজারের এক একটা শেয়ার। বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হিসেবে এক টাকার নিচেও শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে এটা রেকর্ড হয়ে থাকবে বাংলার ইতিহাসে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শেয়ার বাজারে এক টাকার নিচেও মিলছে শেয়ার। আজ ৩ নভেম্বরের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তিনটি কোম্পানি প্রিমিয়ার লিজিং,ফার ইস্ট ফাইন্যান্স ও পিপলস লিজিং যথাক্রমে ৯০ পয়সা ও ৯১ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। এছাড়া ১ টাকা রেঞ্জে লেনদেন হচ্ছে ৬ টি এবং ২ থেকে ৩ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে ১৭ টি।

৯০ পয়সা থেকে ৩ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে যে সব কোম্পানি
এদিকে শেয়ারের দাম ১ টাকার কাছাকাছি আসাতে,এক টাকার নিচে লেনদেন হওয়া শেয়ারের জন্য নতুন টিক সাইজ (শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য পরিবর্তন) নির্ধারণ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। নতুন এই নিয়মে ১ টাকার নিচে মূল্যের শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য পরিবর্তন বা টিক সাইজ নির্ধারণ করা হয়েছে ০.০১ টাকা। যা গত বুধবার (২৯ অক্টোবর ) থেকে তা কার্যকর হয়েছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে সব ধরনের ইক্যুইটি সিকিউরিটিজের টিক সাইজ ০.১০ টাকা নির্ধারিত আছে। কিন্তু সম্প্রতি কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম ১ টাকার নিচে নেমে আসায় বিদ্যমান নিয়ম বাজার বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় লেনদেন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ডিএসই নতুন এই নিয়ম চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সম্প্রতি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল) ও ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড-এর শেয়ার ৯০ পয়সায় নেমেছিল। ফলে প্রতিষ্ঠান দুটির শেয়ার দাম বাড়া ও কমার পথ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ ডিএসইর লেনদেন বিধি অনুযায়ী, শেয়ারের মূল্য পরিবর্তনের ধাপ বা টিক সাইজ ১০ পয়সা। অর্থাৎ কোনো শেয়ারের দাম একবারে ১০ পয়সার কমে ওঠানামা করতে পারে না। অন্যদিকে, সার্কিট ব্রেকার বা দৈনিক দর বৃদ্ধি ও পতনের সীমা রয়েছে ১০ শতাংশ। ৯০ পয়সা দামের শেয়ারে ১০ শতাংশ পরিবর্তন মানে ৯ পয়সা। কিন্তু টিক সাইজ যেহেতু ১০ পয়সা, তাই ৯ পয়সা বাড়া বা কমার সুযোগ নেই। ১০ পয়সা বাড়িয়ে শেয়ারদর ১ টাকা বা ১০ পয়সা কমিয়ে ৮০ পয়সা করা সম্ভব নয় তাহলে নিয়মের লঙ্ঘন হবে। ফলে টিক সাইজে পরিবর্তন আনা হলো। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ অটোমেটেড ট্রেডিং রেগুলেশনস, ১৯৯৯ এর ১৮ নম্বর প্রবিধানের অধীনে ডিএসই এই নতুন নিয়ম কার্যকর করছে। নতুন ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারীরা এখন ৮৭, ৮৮ বা ৮৯ পয়সার মতো নির্দিষ্ট দামে অর্ডার দিতে পারবেন।
নতুন সরকার আসলে কি তলানিতে থাকা শেয়ারবাজারের উন্নতি হবে? এই প্রশ্ন আপামর বিনিয়োগকারীদে।