বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনের (৮ অক্টোবর) আজ নবম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এই বিশিষ্ট ভাষা সৈনিকের।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবদুল মতিন। ১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্র্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখায় ২০০১ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার ধুবালীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল মতিন। তিনি ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব আর্ট স্নাতক এবং পরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
ভাষা আন্দোলনের পর তিনি ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং পরে সংগঠনটির সভাপতি হন। এর পর কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় হন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠিত) ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ গঠিত হয় এবং আবদুল মতিন নবগঠিত দলের উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য মনোনীত হন। আমৃত্যু তিনি এ পদে আসীন ছিলেন।
তার রচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে ‘জীবনপথের বাঁকে বাঁকে‘, ‘গণচীনের উৎপাদন ব্যবস্থা ওদায়িত্বপ্রথা‘, ‘ভাষা আন্দোলন :ইতিহাস ও তাৎপর্য‘ (আহমদ রফিকের সঙ্গে যৌথভাবে), ‘বাঙালি জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন‘, ‘২১ ফেব্রুয়ারি ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে‘, ‘ভাষা ও একুশের আন্দোলন‘ উল্লেখযোগ্য।
একুশে পদক ছাড়াও তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। আজীবন সংগ্রামী এমানুষটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বার্থে দেহ দান করে গেছেন।
ভাষা সৈনিক,আব্দুল মতিন,৮ অক্টোবর ২০১৪ সালে ৮৭ বছর বয়সে মারা যাবার আগে চরম কস্টে,তার জীবনের শেষ মূহুর্তে মোহাম্মদপুরের ভাড়া বাসাতে আক্ষেপ করে বলেছিলেন,আমাদের খোজ, রাষ্ট্র তথা মানুষজন ফেব্রুয়ারি মাস এলে খোজ নেয়।ফেব্রুয়ারি মাস এলে কত রকমের প্রতিশ্রুতি পাই কিন্তু যেই ফেব্রুয়ারি চলে যায় আর কেউ আসেনা।সব সম্মান আর ভালোবাসা একদিনের জন্যে।
ভবিষ্যতে যেন আর কোন দেশপ্রেমিক যোদ্ধাদের এমন অবমূল্যায়ন না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
হে আল্লাহ্ ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন সহ সকল দেশপ্রেমিক শহীদদের জান্নাতবাসী করুন।আমীন।