বাংলাদেশে একান্ত অবহেলায় চলে খেজুরের রসের গুড় তৈরি। অথচ সহজ এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খেজুর গাছের রস আহরণ করে গুড় তৈরি করতে পারলে আমদানিকৃত চিনির মূল্য বাবদ বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হত।
প্রান্তিক পর্যায়ে খেজুর গুড়ের বহুল ব্যবহার বাঙালি জীবনধারার শত বছরের একটি পুরোনো ঐতিহ্য, যার বিশাল অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্যসম্মত সম্ভাবনাও রয়েছে। ঐতিহ্য এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও খেজুর রসের আহরণের প্রক্রিয়াটি দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অথচ ৩০/৩৫ বছর আগেও দেশের প্রান্তিক মানুষরা খেজুরের গুড়ের উপরই মূলত নির্ভরশীল ছিল। বিশেষত গ্রামের এক শ্রেণীর মানুষ চিনির সাথে তেমন পরিচিত ছিল না।
রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে বাংলাদেশকে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে প্রতিবছর প্রায় ২৫ থেকে ২৮ লক্ষ মেট্রিক টন চিনি আমদানি করতে হয়, বাংলাদেশি টাকায় যার জন্য খরচ হয় প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। উদ্বেগের বিষয় হলো চিনির আমদানি প্রতিবছর বেড়েই চলেছে, এমনকি দেশীয় চিনিকলগুলোও নানা কারণে উৎপাদন ক্ষমতা হারাচ্ছে।
এ দেশে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের ক্ষেত্রে এখনো সনাতন পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয়। তাই এ কাজে বর্তমান প্রজন্ম নিরুৎসাহিত হচ্ছে এবং দক্ষ গাছীও তৈরি হচ্ছে না। ফলে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ গাছ হতে রস আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন না করায় খেজুর রস বাহিত নানাবিধ জটিল রোগ বিস্তারের খবর পাওয়া যায়। অথচ যদি সরকারের একান্ত পৃষ্ঠপোষকতায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রস আহরণ এবং গুড তৈরি পদ্ধতি সহজতর করা যেত, তবে গুড়ের উৎপাদন, চাহিদা এবং ব্যবহার বৃদ্ধি পেত। এতে চিনির বিকল্প হিসেবে গুড় ভালো ভূমিকা রাখতে পারত এবং চিনি আমদানির খরচ ৩০-৩৫% কমে যেত।
আজকাল কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই অনেক অভিজাত মিস্টি উৎপাদনকারীরা খেজুর গুড় ব্যবহার করে দামি এবং সুস্বাদু মিষ্টি তৈরি ও তা আকর্ষণীয়ভাবে পরিবেশনের প্রক্রিয়া শিখে ফেলেছে।
খেজুর গুড়ের খাদ্য মানকে বিবেচনায় এনে ব্রিটিশ সরকার ও কৃষকদের গুড় উৎপাদনে প্রেরণা দিত। দুঃখের বিষয় একটি স্বাধীন দেশের সরকার এ বিষয়ে কিছুই করেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে খেজুরের গুড় অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত এবং চিনির তুলনায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকটাই কম।
খেজুর গাছ রোপণের জন্য কোন আবাদি জমি বা ঘরবাড়ি নষ্ট করতে হয় না। রেললাইন ও রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়ে এবং বাড়িরআঙ্গিনায় অব্যবহৃত জমিতে এই গাছ অতি সহজেই নূন্যতম পরিচর্যায় বেড়ে উঠে, জমির ক্ষয় রোধ করে, বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় মানুষের জীবন বাঁচায়। এই সহজলভ্য নিজস্ব সম্পদ আহরণের উদ্যোগ নিলে নিশ্চিত ভাবে দেশে কিছু কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
সরকারের কৃষি ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে দেশপ্রেম দেখাতে হবে। কেবল আদেশ পালনের জন্য কাজ করে গেলে খেজুর গাছের রস গাছেই নষ্ট হবে আর চিনি আমদানিকারকরা দেশ বিদেশে সম্পদ কুক্ষিগত করার সুযোগ পাবে ।
লেখক- লেঃ কর্নেল জাকির (অবঃ)
Author
-
'ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম' একটি নির্ভরযোগ্য শেয়ার বাজার ভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল। অর্থ ও বাণিজ্য, রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি, প্রতিবেদন, বিশ্লেষণমূলক লেখা প্রকাশ করে।
View all posts
'ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম' শেয়ার মার্কেটের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সততার সহিত পরিবেশন করে এবং কোন সময় অতিরঞ্জিত, ভুল তথ্য প্রকাশ করেনা এবং গুজব ছড়ায়না, বরং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে বদ্ধ পরিকর। এটি একটি স্বাধীন, নির্দলীয় এবং অলাভজনক প্রকাশনা মাধ্যম।