ঢাকা শেয়ার বাজার

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার ৪ আশ্বিন ১৪৩১

কেন ? কি কি কারণে বোনাস শেয়ারের অনুমোদন হচ্ছেনা?

সবার আগে শেয়ার বাজারের নির্ভর যোগ্য খবর পেতে আপনার ফেসবুক থেকে  “ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম” ফেসবুক পেজে লাইক করে রাখুন, সবার আগে আপনার ওয়ালে দেখতে। লাইক করতে লিংকে ক্লিক করুন  facebook.com/dhakasharebazar2024

দেশের পুঁজিবাজারে বেশ কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের বোনাস বিএসইসির থেকে অনুমোদন প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে কেন করা হচ্ছে?! কেন বাদ যাচ্ছে বোনাসের অনুমোদন?

আজ বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা যাক কেন বোনাস অনুমোদন হচ্ছে না।

আমাদের দেশে এক সময়ে বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার হিড়িক ছিল, কে কত বেশি বোনাস লভ্যাংশ  দিতে পারে। যদিও আমরা মনে করি বোনাস লভ্যাংশ দিলে অনেক উপকার। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অনেক কোম্পানি বোনাস লভ্যাংশ দিতে দিতে কোম্পানির পারফরম্যান্স দিন দিন কমে যায়। এবং একটি রুগ্ন কোম্পানিতে পরিণত হয়। যা গত দশ বছরে অনেক ইতিহাস আছে।

একটি কোম্পানি কখন বোনাস দিতে পারবে?

পুঞ্জিভূত মুনাফা বা শেয়ার প্রিমিয়ামের টাকা থেকে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করা যাবে। তবে মূলধন রিজার্ভ বা সম্পদ পুনঃমূল্যায়ন জনিত মুনাফা বা কোনো আনরিয়েলাইজড মুনাফা থেকে বা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যবসা শুরু না করেই, কোনো কার্যক্রম থেকে মুনাফা পেলে, সেই মুনাফা থেকে বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করা যাবে না।

 

আগে দেখা গেছে, কিছু কোম্পানির বাণিজ্যিক বা উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান নিয়মে বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানির উৎপাদন বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলে অর্থাৎ তার মূল ব্যবসায়িক আয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে বোনাস শেয়ার ইস্যু করে নতুন করে মূলধন বাড়াতে পারবে না।

 

বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুসারে কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণ, সুষমকরণ, আধুনিকীকরণ (বিএমআরই), গুণগত মান উন্নয়ন ইত্যাদির জন্যে বিনিয়োগ প্রয়োজন হলেই কেবল বোনাস দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে মূল্য সংবেদনশীল তথ্যে (Price Sensitive Information-PSI) বোনাস দেওয়ার কারণ এবং বোনাসের বিপরীতে রক্ষিত অর্থের ব্যবহারের খাত সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করতে হবে।

মূলত লাগামহীন ভাবে বোনাস ইস্যুর কারণে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

উল্লেখ্য,  বোনাস হচ্ছে শেয়ার হোল্ডারদের কে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার পরিবর্তে তার বিপরীতে শেয়ার দেওয়া। বোনাস দেওয়া হলে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়। তাই অকারণে বোনাস দেওয়া হলে তাতে কোম্পানির মুনাফা বাড়ে না। উল্টো একই মুনাফা বেশি সংখ্যক শেয়ারে ভাগ (Dilution) হয় বলে শেয়ার প্রতি আয় বা ইপিএস কমে যায়। তাতে লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতাও আনুপাতিক হারে কমে আসে।

 

সাধারণত ব্যবসা সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন, বিএমআরই ইত্যাদির জন্য পুনর্বিনিয়োগ প্রয়োজন হলে কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে বোনাস দিয়ে থাকে। কারণ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট অর্থ কোম্পানির তহবিল থেকে বের হয়ে যায়। তাতে পুনরায় বিনিময় জন্য তহবিলের কিছুটা সঙ্কট দেখা দেয়। কিন্তু শেয়ার বোনাস দিলে ওই অর্থ কোম্পানির তহবিলেই থেকে যায়। তাই পুনরায় বিনিময় সহজ হয়।

 

কিছু অসাধু উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারীদের ঠকানো ও নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যে বোনাস শেয়ার এর সুযোগের অপব্যবহার করে আসছিল। মোটা দাগে দুইভাবে বোনাসকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার বানানো হয়।

প্রথমত উদ্যোক্তা-শেয়ারে লক-ইন এর কারণে ৩ বছর পর্যন্ত তা বিক্রি করা যায় না বলে অসাধু উদ্যোক্তারা বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে, প্রাপ্ত বোনাস শেয়ার বাজারে বিক্রি করে দেয়।

 

সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে আসা আইপিও গুলোর ক্ষেত্রে এই ঘটনা বেশি ঘটেছে। দুর্বল মৌলের কোম্পানি হয়েও হিসাব কারসাজির মাধ্যমে ভালো মুনাফা দেখিয়ে বাজারে কৃত্রিম ভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। আর এই বাড়তি দামে শেয়ার বিক্রি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

 

অন্যদিকে অনেক দুর্বল মৌলের কোম্পানি যার লভ্যাংশ দেওয়ার সামর্থই নেই, সেই কোম্পানিও কৃত্রিম মুনাফা দেখিয়ে শেয়ার মূল্য কারসাজি করেছে। কোন কোন কোম্পানি বছরের পর বছর বোনাস দেওয়ায় পরিশোধিত মূলধন ও শেয়ার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে হাওয়াই মিঠাইতে পরিণত হয়েছে। দিন দিন আরও দুর্বল ও রুগ্ন হয়েছে এসব কোম্পানি।

পরিশেষে একটা কথা বলাই যায়, কঠোর নজরদারিতে এলে অনেক কিছুই দেশের শেয়ার বাজারে সুবদল হয়ে যাবে। যা উন্নত দেশ, স্মার্ট বাজার ও স্বচ্ছতার প্রতিচ্ছবি।

Author

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আপনি এটাও পড়তে পারেন

3 Responses

  1. আমি বোনাস শেয়ার পক্ষপাতী নেই । এটা আসলে কোম্পানি একটু দুর্নীতির একটু চিত্র। ক্যাশ ডিভিডেন্ড ক্ষেত্রে একটি নিয়ম থাকা উচিত । যেমন সর্বনিম্ন কত পার্সেন্ট dividend দেওয়া জানে । অনেক কোম্পানি আছে ১০ টাকা আয় করে 2টাকা ক্যাশ দে যা বিনিয়োগারীদের সাথ একটি বড় ধরনের প্রতারণা। এর একটি আইন বা কাঠামো করা উচিত। আসা করি বিএসইসি বিষয়টা একটু ভেবে দেখবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

শেয়ার বাজার
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত !!