উন্নত দেশগুলোতে বন্ড যতটা জনপ্রিয় বাংলাদেশ শেয়ার মার্কেটে বন্ড ততটা জনপ্রিয় হয়নি। বন্ড মার্কেটে বায়ার সেলার খুবই কম থাকে, তাই প্রয়োজনে বন্ড সাথে সাথে বিক্রি করা নাও যেতে পারে। যার জন্য বিনিয়োগকারীগন বন্ড ক্রয় করতে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না।
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য বন্ড হচ্ছে আদর্শ। নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য পোর্টফোলিওতে শেয়ার এবং বন্ড উভয় রাখাই বিনিয়োগকারীদের জন্য সর্বোত্তম পন্থা।
বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জন্য সঞ্চয়ের চেয়ে অধিক সুদহার, মূলধন ফেরত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, স্থির বিনিয়োগে সুবিধা, নিয়মিত আয়ের সুযোগ, স্বল্প মূলধন এবং সহজেই তারল্যে রূপান্তরের সুযোগসহ নানা সুবিধা রয়েছে। ইস্যুয়ার কোম্পানির জন্য জামানতবিহীন দীর্ঘ মেয়াদি অর্থ সংগ্রহের সুযোগ, চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ প্রদান না করার সুবিধা, মুদ্রাস্ফীতিজনিত কারণে সুদ হার পরিবর্তন না হওয়া, সুদ খরচ হিসাবে দেখানোর কারণে ট্যাক্স বার্ডেন হ্রাসসহ রয়েছে নানা সুবিধা।
বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটের প্রভূত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অদৃশ্য অবহেলার কারণে আজও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। কর্পোরেট গভার্নেন্স এর দুর্বলতা, বিনিয়োগবান্ধব ট্যাক্স কাঠামোর অভাব, পর্যাপ্ত তথ্যের ঘাটতি, তথ্যের অস্বচ্ছতা এবং যথাযথ আইনের প্রয়োগের অভাব দীর্ঘমেয়াদি ফান্ড এর উৎস হিসেবে বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপসমূহকে সাফল্য অর্জনে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।
বন্ড মার্কেটকে প্রতিনিয়ত নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এ মার্কেটে চ্যালেঞ্জসমূহ বলতে গেলে বলতে হয়, কোন নির্দিষ্ট সুদ হার নির্ধারণ প্রক্রিয়া ও বেঞ্চমার্ক বন্ডের অনুপস্থিতি, সরকারি ইন্সট্রুমেন্টের উচ্চ সুদ প্রাইভেট বন্ড ইস্যুর প্রসারের অন্তরায়, ব্যাংকিং সিস্টেমের আধিপত্য, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান, কম সংখ্যক মার্কেট প্লেয়ার বা ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, কর্পোরেট বন্ড ইস্যুতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, স্বল্প বৈচিত্র্যপূর্ণ মার্কেটে নতুন নতুন ঋণ প্রোডাক্ট এর অভাব, আর্থিক সেক্টরের অস্থিরতা, বন্ড ইস্যুতে অর্থনৈতিক সুবিধাসমূহ শনাক্ত না হওয়া, বন্ড পত্রকোষ তৈরিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনিচ্ছা, রক্ষণশীল বিনিয়োগ নীতি, ঝুঁকি গ্রহণ ও পরিমাণ নির্ধারণে বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার অভাব, বন্ড ছাড়ার উচ্চ ব্যয়, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ হারের স্বল্পতা, বিপুল পরিমাণ অ-পারফর্মিং ঋণ এর উপস্থিতি।
বাংলাদেশের বন্ড মার্কেট উন্নয়নে সরকারকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে যে সকল বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে সেগুলো হচ্ছে পোর্টফোলিও পরিচালনা এবং কর্মক্ষমতা পরিমাপের উদ্দেশ্যে বন্ড সূচক তৈরি করা, অধিক ইসলামি বন্ড চালু করা, বিনিয়োগ শিক্ষাকার্যক্রমের প্রসার ঘটানো, পেনশন ফান্ড ও প্রভিডেন্ড ফান্ড এর বিনিয়োগ বন্ড খাতে উৎসাহিত করা, বন্ড মার্কেটের দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বন্ড মার্কেটের তথ্যকে জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো, বন্ড মার্কেটে অর্থ জমা, ক্লিয়ারিং এবং সেটেলম্যান্ট ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, বন্ড ইস্যু খরচ হ্রাস, ক্রেডিট রেটিং ইন্ডাস্ট্রিকে আরো শক্তিশালী করা, আইন ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো অধিক কার্যকর করা, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি, বন্ড সংক্রান্ত প্রচলিত আইনসমূহকে হালনাগাদ করে বিনিয়োগকারী ও ইস্যুয়ার বান্ধব করা এবং যথাযথ ইনসেনটিভ প্রদানের মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগকে আকর্ষণ করা।