ঢাকা শেয়ার বাজার

১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার ৩ পৌষ ১৪৩২

নতুন করে আইপিও’তে আসতে কোম্পানির চ্যালেঞ্জসমূহ

সবার আগে শেয়ার বাজারের নির্ভর যোগ্য খবর পেতে আপনার ফেসবুক থেকে  “ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম” ফেসবুক পেজে লাইক করে রাখুন, সবার আগে আপনার ওয়ালে দেখতে। লাইক করতে লিংকে ক্লিক করুন  facebook.com/dhakasharebazar2024

অধিকাংশ কোম্পানিই গঠনের সময় উদ্যোক্তাগণ চেষ্টা করেন নিজস্ব পুঁজি দিয়েই ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে। একটা সময় কোম্পানি বড় হয়। উদ্যোক্তাগণ অভিজ্ঞতা লাভ করেন এবং তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটি বৃহৎ আংগিকে সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

কিন্ত এতদিন যেভাবে প্রতিষ্ঠান চালিয়েছেন সেভাবে নয়, এখন প্রতিষ্ঠানটি প্রাইভেট থেকে পাবলিকে রুপান্তর হওয়ায় তাকে কর্পোরেট গভার্নেন্স থেকে শুরু করে পালন করতে হবে বিভিন্ন অথরিটির দেয়া নির্দেশনাও। তাই তাকে ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে অভিজ্ঞ ইস্যু ম্যানেজারের সঠিক পরামর্শ নিয়ে গ্রহণ করতে হয় প্রস্তুতি। আর তাইতো কোন কোম্পানি যখন পুঁজিবাজার থেকে Initial Public Offering (IPO) এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহের আগ্রহ প্রকাশ করে, তখন তাকে স্বাভাবিক ভাবেই কিছু চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হতে হয়। আগ্রহী কোম্পানি ২/৩ বছর পূর্বেই যদি প্রস্তুতি শুরু করতে পারে তাহলে কোম্পানি অনেক চ্যালেঞ্জ সহজেই মোকাবেলা করতে পারে।

প্রাথমিকভাবে একটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে যে সকল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় তার কয়েকটি নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

পাবলিক ইস্যু রুলস অনুযায়ী আইপিও আবেদনের পূর্ববর্তী ২ বছর ইস্যুয়ার কোম্পানি বোনাস শেয়ার প্রদান করা ছাড়া পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করতে পারবে না; তাই ইস্যুয়ার কোম্পানিকে ২/৩ বছর আগেই আইপিও’তে আসার পরিকল্পনা করতে হবে এবং সে অনুযায়ী কোম্পানিকে আইপিওর উপযোগী করে গুছিয়ে নিতে হবে।

কোম্পানিকে অবশ্যই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করতে হবে এবং সে অনুযায়ী বোর্ড পুনর্গঠন করতে হবে।

কোম্পানির পরিচালকদেরকে পোস্ট আইপিও পেইড আপ এর ক্ষেত্রে নূন্যতম ২% শেয়ার ব্যাক্তিগত ভাবে এবং ৩০% শেয়ার সম্মিলিতভাবে ধারন করতে হবে বিধায় আবেদনের পূর্বেই সে পরিমাণ শেয়ার ধারন নিশ্চিত করতে হবে।

কোম্পানিতে রুলস অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডাইরেক্টর নিয়োগ দিতে হবে।

পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালক অন্য কোন কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে থাকতে না পারার শর্ত থাকায় ইস্যুয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অন্যান্য কোম্পানিতে এরূপ পদে বহাল থাকলে তা থেকে পদত্যাগ করতে হবে বা প্রয়োজনীয় অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ CIB রিপোর্ট অনুযায়ী ইস্যুয়ার কোম্পানিকে পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডারদের ধারনকৃত শেয়ারের ১০% বা তার বেশি ঋণ খেলাপি হতে পারবে না, যদি থেকে থাকে তা সংশ্লিষ্ট পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডারদের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

ইস্যুয়ার কোম্পানির গঠন থেকে শুরু করে আবেদনের পূর্ব পর্যন্ত যতগুলো শেয়ার এ্যলটমেন্ট হয়েছে তার নগদ পরিশোধের প্রমাণক হিসেবে কোম্পানির ব্যাংক হিসাব বিবরণী এবং নগদ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে ভেনডর এগ্রিমেন্ট অথবা সংশ্লিষ্ট আরজেএসসি সংক্রান্ত কাগজাদির সার্টিফাইড কপি প্রমাণক হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়াও শেয়ার হস্তান্তর সংক্রান্ত ফরম ১১৭ ও সংশ্লিষ্ট আরজেএসসি সংক্রান্ত কাগজাদির সার্টিফাইড কপি, হালনাগাদ সিডিউল X, ফরম XII এবং সংঘস্মারক ও সংঘবিধি  (যতবার পরিবর্তত হয়েছে) সংরক্ষণ করতে হবে।

ফিক্সড প্রাইস মেথডে পুঁজি সংগ্রহ করতে হলে ইস্যুয়ার কোম্পানির কমপক্ষে ১৫.০০ কোটি টাকা এবং বুক বিল্ডিং মেথডে ৩০.০০ কোটি টাকা নূন্যতম পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে, এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিমাণ মূলধন আইপিও আবেদনের পূর্ববর্তী ২ বছর এর পূর্বেই বৃদ্ধি করা যেতে পারে অথবা বোনাস শেয়ার ইস্যু করা যেতে পারে।

ইস্যুয়ার কোম্পানিকে নিয়মিত Annual General Meeting (AGM) করতে হবে; তাই পেন্ডিং AGM সমূহ যথানিয়মে দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

শেয়ার রেজিস্ট্রার ও সম্পদ রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করতে হবে।

ইস্যুয়ার কোম্পানিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক ঘোষিত প্যানেল অডিটর দ্বারা আর্থিক বিবরণী অডিট করাতে হবে, তাই সর্বশেষ ২/৩ বছরের অডিটর নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএসইসি কর্তৃক ঘোষিত প্যানেল অডিটরের হালনাগাদ তালিকা যাচাই করে অডিটর নিয়োগ করতে হবে।

ইস্যুয়ার কোম্পানিকে ফিক্সড প্রাইস মেথডে আসতে হলে সর্বশেষ আর্থিক বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে net profit after tax এবং net operating cash flow ইতিবাচক থাকতে হবে, তবে বুক বিল্ডিং মেথডে সর্বশেষ পূর্ববর্তী ২টি আর্থিক বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এগুলো ইতিবাচক থাকতে হবে।

বুক বিল্ডিং মেথডে পুঁজি সংগ্রহ করতে হলে ইস্যুয়ার কোম্পানিকে নূন্যতম ৩ বছর Commercial Operation এ থাকতে হবে।

বুক বিল্ডিং মেথডে পুঁজি সংগ্রহ করতে হলে ইস্যুয়ার কোম্পানিকে কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত Credit Rating কোম্পানি দ্বারা রেটিং করাতে হবে।

আইপিও’তে আবেদনের পূর্বেই ইস্যুয়ার কোম্পানিকে Audit Committee ও Nomination and Remuneration Committee (NRC) গঠন করে নিয়মিত সভার আয়োজন করতে হবে।

ইস্যুয়ার কোম্পানিকে Worker Profit Participation Fund (WPPF) গঠন করতে হবে এবং এর লিগ্যাল কার্যাদি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে।

কোম্পানিতে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের আইনগত প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্বে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে থাকলে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে অনাপত্তি পত্র সংগ্রহ করতে হবে।

আইপিও আবেদনের সাথে নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীসহ প্রসপেক্টাস ১২০ দিনের মধ্যে বিএসইসি’তে জমা দিতে হবে।

ইস্যুয়ার কোম্পানিকে বিএসইসি কর্তৃক জারিকৃত কর্পোরেট গর্ভনেন্স পাইডলাইন পরিপালন করতে হবে।

সর্বোপরি কোম্পানিকে নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা ও পর্যাপ্ত তারল্য ও ইনভেন্টরি ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হতে হবে।

উপরিউক্ত প্রাথমিক চ্যালেঞ্জগুলো ছাড়াও প্রতিষ্ঠান ভেদে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের উদ্ভব হয়। তাই কোম্পানিকে অভিজ্ঞ ও সুদক্ষ ইস্যু ম্যানেজার, বিএসইসি ঘোষিত অডিটর এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পারমর্শ নিয়েই আইপিও’তে আসার প্রস্তুতি নিতে হবে।

Author

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আপনি এটাও পড়তে পারেন
শেয়ার বাজার

আপনি এই পৃষ্ঠার কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না।