ইসলাম মানে শান্তি, ইসলাম হল জীবনের সংবিধান। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলার নিয়ম। আমরা প্রায়ই কিছু সাধারণ বিষয়ে ভুল করে থাকি হরহামেশাই।
আমরা সবচেয়ে বেশি ইনশাআল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ বলতে গিয়ে এর ভুল ব্যবহার করে থাকি।যেমন ভাই কেমন আছেন? উত্তরে সেই ভাই বলেন, ইনশা আল্লাহ ভাল আছি। কিন্তু ইনশা আল্লাহ মানে হলো মহান আল্লাহ যদি চান তাহলে। ভবিষ্যতে হবে, করবো বা ঘটবে এমন কোনো বিষয়ে ইনশাআল্লাহ বলা হয়।
তাই আজকের আলোচনা ইসলামি পরিভাষার নির্দিষ্ট কয়েকটি শব্দ নিয়ে, যে শব্দ গুলো বেশিরভাগ মুসলমানই জানেন। কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে অসচেতন। তেমন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ও তার প্রয়োগ নিয়ে নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
আলহামদুলিল্লাহ:
আলহামদুলিল্লাহ শব্দের অর্থ সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। যে কোনো সুখবর বা ভালো অবস্থা সম্পর্কিত সংবাদের বিপরীতে সাধারণত শব্দটি বলা হয়ে থাকে। যেমন ভাই কেমন আছেন? জবাবে বলা উচিত, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
আপনি কেমন আছেন? আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের ভাগ্নি সোহা এ বছর ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করেছে। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের ভাতিজা জিদান নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের ভাতিজি লাইবা ও মাইসা আমেরিকা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের কৃষ্টি ও কালচার মেনে বড় হচ্ছে।এরকম ভাবে ভালো অবস্থা বুঝাতে ও সুখবরের জন্যে আমরা আলহামদুলিল্লাহ ব্যবহার করব।
ইনশাআল্লাহ:
ইনশাআল্লাহ শব্দের অর্থ মহান আল্লাহ যদি চান তাহলে। ভবিষ্যতে হবে, করবো বা ঘটবে এমন কোন বিষয়ে ইনশাআল্লাহ বলা সুন্নত। যেমন- ইনশাআল্লাহ আমি এখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ব। ইনশাআল্লাহ আমাদের ভাতিজা জিহান ভবিষ্যতে একজন মানবিক ডাক্তার হবেন।ইনশাআল্লাহ আমাদের ভাতিজি ধানসিড়ি একজন আলাপী মেয়ে হিসাবে আমাদের পরিবারের বন্ধন মজবুত রাখতে ভবিষ্যতে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখবে মনে হচ্ছে।
আমাদের জীবনের ১ সেকেন্ডের গ্যারান্টি নেই তাই আমাদের সব সময় যে কোন কাজ করার পূর্বে অবশ্যই ইনশাআল্লাহ বলা উচিত।
মাশাআল্লাহ:
মাশাআল্লাহ শব্দের অর্থ আল্লাহ যেমন চেয়েছেন। যে কোনো সুন্দর এবং ভালো বিষয়ের ব্যাপারে এটি বলা হয়। যেমন- মাশাআল্লাহ তোমার মেয়েটি অনেক সুন্দর। মাশাআল্লাহ আমার ছেলে আয়ান একজন মানবিক এবং অহংকারমুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে।
কিন্তু আমরা ব্যবহার করি, কিউট, ওয়াও ,জোস ,সেই রকম ইত্যাদি। আমরা সবাই চেষ্টা করব সুন্দর এবং ভালো বিষয়ের সবসময় মাশাআল্লাহ ব্যবহার করতে।
সুবহানাল্লাহ:
সুবহান আল্লাহ শব্দের অর্থ আল্লাহ পবিত্র ও সুমহান। আশ্চর্যজনক ভালো কোনো কাজ হতে দেখলে সাধারণত এটি বলা হয়ে থাকে। যেমন সুবহানাল্লাহ বাসটি খাদে পরে গিয়েছিল কিন্তু মানুষ যথাসময়ে বের হতে পেরেছেন ও সবাই অক্ষত আছেন। সুবহানাল্লাহ গ্রহ নক্ষত্রগুলো কত সুন্দর ভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
নাউযুবিল্লাহ:
নাউযুবিল্লাহ শব্দের অর্থ আমরা মহান আল্লাহর কাছ থেকে আশ্রয় চাই। যে কোনো মন্দও গুনাহের কাজ দেখলে তার থেকে নিজেকে আত্মরক্ষার্থে এটি বলা হয়।
আসতাগফিরুল্লাহ:
আসতাগফিরুল্লাহ শব্দের অর্থ আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো অন্যায় বা গুনাহ হয়ে গেলে এটি বলা হয়।
ইন্নালিল্লাহ ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন:
অর্থ নিশ্চয়ই আমরা মহান আল্লাহর জন্য এবং আমরা তার দিকেই ফিরে যাবো। যে কোনো দুঃসংবাদ বা বিপদের সময় এ দোয়াটি পড়তে হয়। অনেকেই কেউ মারা গেলে এই দোয়া না পরলে যেন মৃত ব্যক্তিকে অপমান করেছে মনে করেন। আমাদের দেশে এই দোয়া মানুষ মারা গেলেই পড়ে সাধারণত।
মানুষ মারা গেলে মৃত মানুষের জন্য স্পেশাল করে দোয়া করুন।আমাদের দেশে দেখা যায় মানুষ মারা গেলে বেশিরভাগ % মানুষ শুধু ইন্নালিল্লাহ ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়েন বা বলেন বা কোথাও কমেন্ট করেন।
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ:
অর্থ মহান আল্লাহর সাহায্য ও সহায়তা ছাড়া আর কোনো আশ্রয় ও সাহায্য নেই। শয়তানের কোনো ওয়াস ওয়াসা বা দুরভিসন্ধিমূলক কোনো প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য এটি পড়া উচিত।
আস সালামু আলাইকুম:
কারো সঙ্গে দেখা হলে অন্য কিছু না বলে আস সালামু আলাইকুম বলতে হয়। এটি সুন্নত আমল। এর সওয়াবও অনেক বেশি। আগে সালামদাতা অহংকার থেকে মুক্ত বলে হাদিসে ঘোষণা করা হয়েছে। সালামের অর্থ আপনার ওপর মহান আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের ধনী ব্যক্তিগণ অধস্তন মানুষকে সালাম দেয় না, এমনকি অনেক মাওলানারা ও অন্য একজনকে দেখলে সালাম দেয় না, তিনি সালাম পাওয়ার জন্যে উদগ্রীব থাকে এটা এক ধরনের অহংকার।
জাযাকাল্লাহ:
কেউ আপনার কোনো উপকার করলে- তাকে জাযাকাল্লাহু খায়রান বলুন। অর্থ মহান আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন। আমরা সাধারণত থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাংকস, ধন্যবাদ বলি।
আল্লাহ হাফেজ:
কারও কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বলুন, আল্লাহ হাফেজ। অর্থ মহান আল্লাহ সর্বোত্তম হেফাজতকারী। আমাদের ছেলে মেয়েদের আল্লাহ হাফেজ বলা শেখানোর চেষ্টা করি। টা টা, বায় এর পাশাপাশি।
প্রতিটা বিষয়ই আমাদের জানা কিন্তু আমরা প্রয়োগ করিনা। আবার অনেক সময় ভুল ভাবে ভুল বিষয়ে ব্যবহার করে থাকি। যারা মুসলিম তারা সবাই বিষয়গুলি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহার করার চেষ্টা করি।
Author
-
মোঃ জসিম উদ্দিন তালুকদার মূলত দেশের শেয়ার বাজারের সাথে সরাসরি যুক্ত। তিনি ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, জাহান সিকিউরিটিজ লিমিটেডের। (ডিএসই) পোর্টফোলিও পরিচালনায় সুদক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তিনি ১৯ বছর ধরে শেয়ার বাজারের সাথে যুক্ত। তিনি ‘ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম’ এর প্রকাশক ও সম্পাদক।
View all posts