দেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রধান কাজ হল রাজস্ব সংগ্রহ করা। সেই সঙ্গে তৈরি করতে হয় নীতিও। রাজস্ব সংগ্রহ ও নীতি তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত উভয় বিভাগের কর্মকর্তারাই এনবিআরের আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের।
ফলে ঘুরেফিরে তারাই এ দায়িত্ব পালন করেন। নিজেদের সুবিধামতো নীতি তৈরিরও অভিযোগ রয়েছে।
বিভিন্ন সময় এ দুটি বিভাগকে পৃথক করার দাবি উঠেছে। অফিসের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষও আলাদা করার কথা বলা হয়েছে।চলতি বছরে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরও একই দাবি উত্থাপন হয়। সে অনুযায়ী এনবিআরের নীতি ও প্রশাসন বিভাগকে পৃথক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে আজ এনবিআর ভবনে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে বিশ্বব্যাংক। এতে এনবিআর চেয়ারম্যান ও সদস্য, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলসহ মনোনীতরা উপস্থিত থাকবেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকও চায় এনবিআরের নীতি ও প্রশাসন বিভাগকে আলাদা করা হোক। তাই এ দুটি বিভাগ পৃথক হলে পরবর্তী সময়ে কীভাবে কাজ করা হবে সেমিনারে সে বিষয়ে নিজেদের প্রস্তাব তুলে ধরবে সংস্থাটি। একই সঙ্গে এনবিআর কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতাও তারা শুনবেন।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, ২০০৪ সাল থেকেই এনবিআরের নীতি ও প্রশাসনকে পৃথকের প্রস্তাব করে আসছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ। অন্তর্বর্তী সরকারের এ সময়ে সেটি আরো জোরালো হয়েছে। আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারদের অ্যাসোসিয়েশন এরই মধ্যে তাদের প্রস্তাবও তৈরি করেছে। তাদের দাবি, নীতি ও প্রশাসনে দুজন আলাদা সচিব থাকবেন। উভয় দপ্তরপ্রধান সরাসরি অর্থমন্ত্রীকে রিপোর্ট করবেন। অর্থাৎ কেউ কারো ওপর নির্ভরশীল হবেন না। তবে তারাও আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার থেকে নিয়োগ পাবেন। নীতি ও প্রশাসনের সব কর্মকর্তাও আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার থেকেই নিতে হবে।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, রাজস্ব আয়ের চিন্তা মাথায় থাকলে ভালো নীতি তৈরি করা যায় না। কর আহরণের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজে সমতা নিশ্চিত ও কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে যাওয়া। আমরা চাই, প্রশাসন ও নীতি আলাদা হলেও আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারাই কাজ করবেন। নীতি বিভাগে অবশ্যই গবেষক, পরিসংখ্যানবিদ, অর্থনীতিবিদ, আইনবিদ, অ্যানালিস্ট ও বিশেষজ্ঞরা থাকতে হবে। এছাড়া থাকতে হবে করদাতা তথা ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিও। তবে নন-টেকনিক্যাল কেউ যেন নীতি বিভাগে কাজ না করেন।
অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) হয়ে যাবে পলিসি অর্থাৎ নীতি বিভাগ। তারা শুধু নীতি তৈরি করবেন। তাদের একজন সচিব থাকবেন। আর রাজস্ব সংগ্রহ বা বাস্তবায়ন থাকবে এনবিআরের কাছে। এখানে সচিব পদমর্যাদায় এনবিআর চেয়ারম্যান শুধু রাজস্ব সংগ্রহ তদারক করবেন।
জানা গেছে নীতি ও প্রশাসনকে আলাদা করতে ২০০৮ সালেই একটি আদেশ হয়েছিল। বলা হয়েছিল নীতিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা আইআরডিতে বসবেন। তখন জায়গা না থাকায় সেখানে যাওয়া হয়নি।