ঢাকা শেয়ার বাজার

৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বুধবার ২২ মাঘ ১৪৩১

বাংলাদেশ ভারতের ৩ পণ্যের উপর কতটা নির্ভরশীল?

সবার আগে শেয়ার বাজারের নির্ভর যোগ্য খবর পেতে আপনার ফেসবুক থেকে  “ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম” ফেসবুক পেজে লাইক করে রাখুন, সবার আগে আপনার ওয়ালে দেখতে। লাইক করতে লিংকে ক্লিক করুন  facebook.com/dhakasharebazar2024

ভারতীয় পণ্য বর্জনে ব্যাপক প্রচারণা দেখা গিয়েছিলো আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে। এবার ভারত থেকে বাংলাদেশে নিত্যপণ্য বিশেষ করে চাল, পেঁয়াজ ও আলু রপ্তানি ‘বন্ধ’ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে সে দেশের এক রাজনীতিবিদ বক্তব্য দেয়ার পর দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের বিষয়টি নতুন করে সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে।

রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বা স্থলবন্দর বন্ধ থাকার মতো কারণে ভারত থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ বা হ্রাস পাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। তবে, এবারের প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য নয় বরং রাজনৈতিক আলোচনাই মুখ্য হয়ে উঠেছে।

গত সোমবার পেট্রাপোল স্থলবন্দরের কাছে ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন’ বন্ধ এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তির দাবিতে এক সমাবেশে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ভারত থেকে আলু ও পেঁয়াজ আসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। এতে আগে থেকেই আলোচনায় থাকা এ ইস্যুটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও তর্ক-বিতর্ক বাড়ে।

এদিকে বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তাদের (ভারতের) রাজনৈতিক বক্তব্য যাই হোক, তাদের ব‍্যবসায়ীদের স্বার্থও দেখতে হবে। যে কারণে বাণিজ্যিক সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। ভারত থেকে সর্বশেষ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলার, তথ্য ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের।

বাংলাদেশে রপ্তানিকারকদের তালিকায় চীনের পরেই দেশটির অবস্থান। কিন্তু, উল্লেখিত তিন পণ্য- আলু, পেঁয়াজ ও চালের ক্ষেত্রে ভারতের ওপর আদতে কতটুকু নির্ভরশীল বাংলাদেশ? বাংলাদেশে ২০২৩ সালের আগে কখনো আলু আমদানিই করা হয়নি। দেশটি বরং আলু রপ্তানি করতো। দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য ওই বছরের অক্টোবরে প্রথমবারের মত আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশটি থেকে ১৭ লাখ মার্কিন ডলারের আলু আমদানি হয় বাংলাদেশে। ওই অর্থবছরে বাংলাদেশে আলু উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল এক কোটি ১৬ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ছয় লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)এর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকাশিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

তবে, দেশে আলুর চাহিদা প্রায় ৮০ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ, উৎপাদন চাহিদার তুলনায় কম নয়। আলু যেহেতু কোল্ডস্টোরেজে রাখা যায়, এই সুযোগটা ব্যবসায়ীরা কাজে লাগায়, মজুদ করে রাখে। বলছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হাসনীন জাহান। এর ফলে দাম বৃদ্ধির ঘটনা ঘটে। যে কারণে আমদানির দিকে যায় সরকার। আলু যদি সরাসরি বাজারে দিয়ে দিতে পারতো কৃষক, অর্থাৎ, সরবরাহ যদি স্বাভাবিক থাকতো আমদানি নির্ভরশীলতা কমানো যেতো, বলেন অধ্যাপক জাহান।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৩৭ লাখ মেট্রিক টন লাখ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সেই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ৩৮ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে এ বছর। কিন্তু, এ বছরও ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পেঁয়াজ-রসুন জাতীয় পণ্যের রপ্তানির হিসাবে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবেশী বাংলাদেশে প্রায় ২০ কোটি ডলারের পণ্য পাঠিয়েছে তারা। বাংলাদেশে বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা ২৭-২৮ লাখ টন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছিলেন মসলা গবেষণা কেন্দ্রের তৎকালীন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার মজুমদারের মতে, এর পুরোটাই দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়েই পূরণ করা সম্ভব। তবু কেন আমদানি করতে হয়?

কৃষি অর্থনীতিবিদ হাসনীন জাহান বলেন, পেঁয়াজের বেলায় প্রজেকশন (পূর্বাভাস) ঠিকমতো করা হয় না। কৃষক হয়তো এক বছর দাম পাচ্ছে না, ফলে পরের বছর কম চাষ করে। কিংবা একবছর দাম বেশি পেলে পরেরবার চাষের পরিমাণ বাড়ে, ব্যাখ্যা করেন তিনি। তথ্যের ঘাটতি না থাকলে এবং অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ও বাজার ব্যবস্থায় তদারকি ঠিকমতো করা গেলে আমদানি এড়ানো যেতো বলে মনে করেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশকে ধান-চালের নিরিখে ‘খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ’ বলে দাবি করা হতো। কিন্তু, তারপরও চাল আমদানি থেমে থাকেনি। ভারত থেকে বাংলাদেশে চাল আমদানির তথ্যে বছর ভেদে ব্যাপক পার্থক্য দেখা গেছে। একেক বছরে আমদানির পরিমাণ একেক রকম।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দেড় কোটি ডলারের চাল রপ্তানি করা হয়েছিল বাংলাদেশে। তবে এর আগের অর্থ বছরে ৩১ কোটি ডলারের চাল বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়। সর্বশেষ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার কোটি ৩৪ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয় চার কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন।

জাতিসংঘের বাণিজ্য বিষয়ক ডেটাবেইজ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে আট কোটি ডলারের বেশি চাল রপ্তানি করেছে ভারত। পরিমাণের দিক থেকে ২ লাখ ১৫ হাজার টন প্রায়। ভারত ছাড়াও ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ড থেকে চাল আনে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) থেকে গত এপ্রিলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস করা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের চাল আমদানি শুন্যের কাছাকাছি নেমে আসতে পারে।

চলতি বছর বোরোর ভালো ফলন এবং আউশ-আমনের পরবর্তী মৌসুমের কথা বিবেচনায় নিয়ে সংস্থাটি বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করতে পারে দেশটি। বোরোর ভালো উৎপাদনের কথা উল্লেখ করে কৃষি অর্থনীতিবিদ হাসনীন জাহান বলেন, সমস্যাটা হয় ডিস্ট্রিবিউশন (বন্টন) পর্যায়ে। মজুদদারি ঠেকিয়ে সরবরাহ ব্যবস্থা মজবুত করা গেলে চালের মূল্যবৃদ্ধি বা যোগান সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব বলে মন্তব্য তার।

খবর: বিবিসি

Author

  • 'ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম' একটি নির্ভরযোগ্য শেয়ার বাজার ভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল। অর্থ ও বাণিজ্য, রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি, প্রতিবেদন, বিশ্লেষণমূলক লেখা প্রকাশ করে।

    'ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম' শেয়ার মার্কেটের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সততার সহিত পরিবেশন করে এবং কোন সময় অতিরঞ্জিত, ভুল তথ্য প্রকাশ করেনা এবং গুজব ছড়ায়না, বরং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে বদ্ধ পরিকর। এটি একটি স্বাধীন, নির্দলীয় এবং অলাভজনক প্রকাশনা মাধ্যম।

    View all posts
Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আপনি এটাও পড়তে পারেন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

শেয়ার বাজার

আপনি এই পৃষ্ঠার কন্টেন্ট কপি করতে পারবেন না।