বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে বৈশ্বিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা ফিচ রেটিং। গতকাল সোমবার (২৫শে আগস্ট) নতুন পূর্বাভাসে সংস্থাটি দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা ইস্যুয়ার ডিফল্ট রেটিং (আইডিআর) স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক করেছে। ফিচ রেটিং বাংলাদেশের আইডিআরকে ‘বিবি মাইনাস’ বলে নিশ্চিত করেছে।
আইডিআর স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক হওয়ার অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশের খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি, তবে বাংলাদেশ এখনো তার ঋণের দায় মেটাতে বা বাধ্যবাধকতা পূরণে সক্ষম। এ ছাড়া সরকারে ঋণও সম পর্যায়ের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম—জিডিপি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও ভালো; কিন্তু রাজস্ব–জিডিপির নিম্ন অনুপাত, নিম্ন মাথাপিছু আয়, ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা ও সুশসানের ঘাটতির কারণে ভালো দিকগুলো ফিকে হয়ে যায়।
এক বছর আগেও ফিচ বলেছিল, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মুদ্রায় ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান স্থিতিশীল।
ফিচ রেটিং নতুন পূর্বাভাসে বলেছে, নেতিবাচক পূর্বাভাসের অর্থ হলো, অর্থনীতির বহিস্থ খাতের অবনতি; যে কারণে ধাক্কা আসলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, যেমন মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণের পদ্ধতি পরিবর্তন, ঋণদাতাদের সহায়তা নেওয়া—এসব করেও বিদেশি মুদ্রার মজুতের পতন ঠেকানো যায়নি বা বাজারে ডলারে সংকট মেটানো যায়নি। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এসব বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিলেও সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি।
ক্রমবর্ধমান আমদানি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে থাকবে। এ জন্য বছর শেষে রিজার্ভ ১৯ শতাংশ কমে ২৭ দশমিক ৩ বিলিয়নে নামবে। রির্জাভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ) বাদ দিলে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ নেমে আসবে ২১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে।
ফিচ রেটিং বলছে, রিজার্ভ পরিস্থিতি এখনো চ্যালেঞ্জের মধ্যে, বিনিময় হার নিয়ন্ত্রিত, তেলের দাম বেশি এবং ভবিষ্যতে আমদানি বিধিনিষেধ শিথিল করার চাপের কারণে চলতি হিসাবে ঘাটতি ২০২৫ সাল পর্যন্ত থাকতে পারে। সংস্থাটি আরও বলেছে, ২০২৪–২৫ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা পূরণের সক্ষমতা অর্জন করা উচিত বাংলাদেশের।
এর আগে বৈশ্বিক ঋণমান নির্ণয়কারী আরও দুই বড় প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল এবং মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিসও বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে। এসঅ্যান্ডপি, মুডিস ও ফিচ রেটিং—এই তিন প্রতিষ্ঠানকে সম্মিলিতভাবে ‘বিগ-থ্রি’ বলা হয়। ঋণমান নির্ণয়ে এই তিন সংস্থাকে বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান মনে করা হয়।
গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশ–সংক্রান্ত ঋণমান আভাস বা রেটিং আউটলুক কমিয়েছে। তখন তারা বাংলাদেশের ঋণমানের অবস্থা স্থিতিশীল থেকে ‘নেতিবাচক’ ঘোষণা করেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বভৌম ঋণমান দীর্ঘ মেয়াদে ‘বিবি মাইনাস’ ও স্বল্প মেয়াদে ‘বি’ বলে নিশ্চিত করেছে এসঅ্যান্ডপি।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল বলেছিল, স্বল্প মেয়াদে বিদেশি মুদ্রায় বাংলাদেশ সরকারের যে অর্থ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আছে, তার অবস্থা আগামী বছর আরও খারাপ হতে পারে। এর ওপর বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মুখে আছে। মূলত এ দুই কারণে বাংলাদেশবিষয়ক পূর্বাভাস হ্রাস করে এসঅ্যান্ডপি।
মে মাসের একেবারে শেষ দিকে মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের ঋণমান কমায়। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন উঁচু মাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি রয়েছে। একই সঙ্গে চলমান সংকটের মধ্যে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এ কারণে মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে বিএ৩ থেকে বি১-এ নামিয়েছে।
তবে বাংলাদেশের জন্য মুডিস তাদের পূর্বাভাস স্থিতিশীল রেখেছে। যদিও স্বল্পমেয়াদি ইস্যুয়ার রেটিংয়ের ক্ষেত্রে ‘নট প্রাইম’ বা শ্রেষ্ঠ গুণসম্পন্ন নয়, এমন মান অব্যাহত রাখার কথাও জানিয়েছে তারা।
মুডিস বলেছে, পরিস্থিতি খানিকটা সহজ হলেও বাংলাদেশে ডলার-সংকট চলমান এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত কমে যাচ্ছে, যা এ দেশের বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতির ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। সেই সঙ্গে আমদানির ক্ষেত্রে নানা ধরনের বাধা তৈরি হয়েছে, যার ফলে জ্বালানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
Author
-
'ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম' একটি নির্ভরযোগ্য শেয়ার বাজার ভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল। অর্থ ও বাণিজ্য, রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি, প্রতিবেদন, বিশ্লেষণমূলক লেখা প্রকাশ করে।
View all posts
'ঢাকা শেয়ার বাজার ডট কম' শেয়ার মার্কেটের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সততার সহিত পরিবেশন করে এবং কোন সময় অতিরঞ্জিত, ভুল তথ্য প্রকাশ করেনা এবং গুজব ছড়ায়না, বরং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে বদ্ধ পরিকর। এটি একটি স্বাধীন, নির্দলীয় এবং অলাভজনক প্রকাশনা মাধ্যম।