বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটে ব্যবসা করতে দেশে ২ টি স্টক এক্সচেঞ্জ আছে। একটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড এবং অপরটি চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড। দেশের শেয়ারবাজারে ( প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) আইপিও হোক আর সেকেন্ডারি বাজার হোক শেয়ার ক্রয় – বিক্রি করতে হলে বিও একাউন্ট (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স হিসাব) লাগবেই। যেমন ব্যাংকে টাকা রাখতে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হয়, তেমনি শেয়ারবাজারেও বিনিয়োগ করতে বিও একাউন্ট খুলতে হয়। আগে বিও হিসাব খুলতে হবে, তারপর শেয়ার কেনাবেচা করতে হবে।
ব্যাংক হিসাব খুলতে যেমন আপনি আপনার পছন্দের ব্যাংক বেছে নেন, তেমনি শেয়ারবাজারে বিও হিসাব খোলার জন্য আছে প্রায় ৪০০ প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক নামে পরিচিত। ব্রোকারেজ হাউসের পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকেও বিও হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে।
একসময় রাজধানীর মতিঝিল এলাকা ছিল শেয়ার বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান এলাকা। ধাপে ধাপে ২০০৬/৭ সালের পরে সেটি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পরে। বর্তমানে ঢাকা শহর ছাড়া সারা বাংলাদেশ জুড়ে বিশেষ করে সব বিভাগীয় শহরে এমন কি জেলা ও থানা শহরে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শাখা রয়েছে।
শেয়ারবাজারে এখন ঘরে বসে অনলাইনে ও বিও হিসাব খোলার সুযোগ চালু হয়েছে। যে কারণে দেশেবিদেশে বসে মানুষ বিও একাউন্ট খুলে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করছেন। প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের আলাদা ফরম রয়েছে বিও একাউন্ট খোলার জন্য। এক এক প্রতিষ্ঠানের ফরম আলাদা হলেও তথ্যের চাহিদা প্রায় একই।
শেয়ারবাজারে বিও হিসাব খুলতে কিছু নির্দিষ্ট নথিপত্র লাগে। তার মধ্যে রয়েছে যার নামে বিও হিসাব খোলা হবে তার ব্যাংক হিসাব নম্বর ও হিসাবের ব্যাংক চেকের একটি ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, হিসাবধারীর ২ কপি ছবি। এ ছাড়া লাগবে নমিনির এক কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র ও টিআইএনের ফটোকপি (টিআইএনের ফটোকপি বাধ্যতামূলক নয়)।
ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংক ভেদে বিও হিসাব খোলার খরচ বিভিন্ন রকম, তবে এক হাজার টাকার মধ্যে। কোন কোন হাউজ বিও হিসাব খোলার খরচ নেয়না। বিও হিসাব খুলে আপনি যদি সেকেন্ডারি বাজারে শেয়ার কেনাবেচা করতে চান, তাহলে আপনাকে সেই অনুযায়ী টাকা জমা দিতে হবে।আর যদি আপিওতে আবেদেন করতে চান তাহলে ভিন্ন হিসাব। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আপনি কোনো কোম্পানির আইপিও শেয়ারে আবেদনের জন্য বিও হিসাব খুলেছেন, তাহলে ওই কোম্পানির আইপিওর এক লট শেয়ার কিনতে যে অর্থ লাগবে, তা আলাদাভাবে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি শুধু আইপিও করার জন্যে আপনার কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার সমপরিমাণ বিনিয়োগ থাকতে হবে।
আবার আপনি যদি সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে যে শেয়ার যতটা কিনতে চান, সেই অনুযায়ী টাকা জমা দিতে হবে। তবে আপনি চাইলেই ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকে খুব বড় অঙ্কের অর্থ নগদে জমা দিতে পারবেন না। আইন অনুযায়ী, একটি ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংক একজন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে একদিনে সর্বোচ্চ ৮.৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদে গ্রহণ করতে পারে। এর বেশি কেউ বিনিয়োগ করতে চাইলে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে সেই অর্থ জমা দিতে হয়।
বিও হিসাব খোলার ক্ষেত্রে আপনার মোবাইল ফোন ও ই–মেইল ঠিকানাটি যথাযথভাবে দেওয়া ভালো। কারণ তাতে আপনারই লাভ। আপনার বিও হিসাবে কোনো শেয়ার কেনাবেচা হলেই তাৎক্ষণিকভাবে আপনার মোবাইলে বার্তা যাবে। যদি আপনি মোবাইল নম্বরটি ঠিকঠাক মতো না দিয়ে থাকেন তাহলে সেই বার্তাটি পাবেন না। তাই আপনার বিও হিসাবের নিরাপত্তায় আপনাকেই সবার আগে সতর্ক হতে হবে।
একটি বিও একাউন্টের বাৎসরিক রক্ষনাবেক্ষন খরচ বার্ষিক ৪৫০ টাকা। আপনার বিও একাউন্ট সচল রাখতে প্রতিবছর ৪৫০ টাকা একাউন্টে রাখতে হবে।তবে চলতি অর্থবছর থেকে ১৫০ টাকা বিও নবায়ন ফি করা হবে বলে জানা গেছে ।আর শেয়ার ক্রয় বিক্রির কমিশন আলাদা ভাবে নেয়া হয়ে থাকে। সাধারণত সর্বোচ্চ ১ লাখে ৫০০ টাকা কমিশন ফি নিয়ে থাকে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। তবে আপনার বিনিয়োগ ফান্ড বেশি হলে কমিশন ফি কিছুটা কমে। ফান্ড ভেদে ২৫০/৩০০/৪০০/৪৫০ এভাবে কমিশন নির্ধারণ করে থাকে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলি।
Author
-
মোঃ জসিম উদ্দিন তালুকদার দেশের পুঁজিবাজারের সাথে সরাসরি যুক্ত। তিনি উপ-মহাব্যবস্থাপক, জাহান সিকিউরিটিজ লিমিটেডের। পোর্টফোলিও পরিচালনায় সুদক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তিনি ২০ বছর ধরে অত্যন্ত সুনামের সহিত পুঁজিবাজারের সাথে যুক্ত আছেন।
View all posts